Tag Archives: বাংলাদেশের আজকের ও সর্বশেষ খবর

বাংলাদেশের আজকের ও সর্বশেষ খবর

সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু : প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের ‘গর্ব, সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটি এখন প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ পদ্মাার বুকে জ¦লে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪১টি স্প্যান যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।’

 

 

সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি বলেন, আমি জানি আজকে বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত। সেই সাথে আমিও আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে এবং ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আজকে আমরা এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সমর্থ হয়েছি।

এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়, এই সেতু দুই পারের যে বন্ধন সৃষ্টি করেছে শুধু তাই নয়। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। তিনি বলেন, এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর আমাদের প্রত্যয় এবং এই জেদ যে, এই সেতু আমরা তৈরী করবোই।

যদিও ষড়যন্ত্রের কারণে এই সেতুর নির্মাণ দুই বছর বিলম্বিত হয়। কিন্তু আমরা কখনো হতোদ্যম হইনি, হতাশায় ভূগিনি, আত্মবিশ^াস নিয়ে এগিয়ে চলেছি এবং শেষ পর্যন্ত সকল অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সেই অমোঘ মন্ত্র ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’র পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, আমরা বিজয়ী হয়েছি। তারুণ্যেও কবি সুকান্তের ভাষায় তিনি বলেন, ‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/জ¦লে পুড়ে-মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়।’

আমরা মাথা নোয়াই নি, আমরা কোনদিন মাথা নোয়াব না, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও কখনও মাথা নোয়াননি, তিনি আমাদের মাথা নোয়াতে শেখান নাই, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছেন। তিনি বাংলার মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা চেয়েছিলেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তাঁর এবং তাঁর সরকারের পথচলা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আজকে বাংলাদেশ বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

মন্ত্রি পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পদ্মা সেতুর নির্মাণ বিষয়ক সূচনা বক্তৃতা করেন। তিনি প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান, প্রজেক্ট ম্যানেজার এন্ড সুপারভিশন কনসালটেন্ট ররার্ট জন এভিস সহ প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সঙ্গে অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পকলা একাডেমি নির্মিত দেশের বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে থিম সংগ পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে স্মারক ডাক টিকেট, সুভ্যেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিল মোহর এবং ১শ’ টাকা মূল্যের স্মারক নোট অবমুক্ত করেন। পদ্মা সেতুর নির্মাণকারক কোম্পানীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী কে একটি পদ্মা সেতুর একটি রেপ্লিকাও উপহার দেওয়া হয়। নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটো সেশনেও অংশ গ্রহণ করেন তিনি। এরপরই প্রধানমন্ত্রী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টোল দিয়ে সেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করেন এবং মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। প্রধান-মন্ত্রীর কন্যা এবং বাংলাদেশের অটিজম আন্দোলনের পথিকৃৎ সায়মা ওয়াজেদ এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর  গাড়ি বহর নিয়ে সেতুটি অতিক্রমের সময় সেতুটির মাঝ বরাবর নেমে সেতু এবং প্রমত্তা পদ্মার উত্তাল তরঙ্গ প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় তিনি বিমান বাহিনীর একটি মনোজ্ঞ ডিসপ্লেও উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী এরপরে পদ্মা সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্তে উপস্থিত হন এবং সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়িতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভাতেও ভাষণ দেন প্রধান-মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাঁর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিয়ে কোনো অপোস করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে।

পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে। পদ্মা সেতুর পাইল বা মাটির গভীরে বসানো ভিত্তি এখন পর্যন্ত বিশ্বে গভীরতম। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত এই সেতুর পাইল বসানো হয়েছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এ রকম আরও বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে এই সেতুর নির্মাণ পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে প্রকৌশলবিদ্যার পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে – এটা নিশ্চিত। কারণ, এটা একটা আশ্চর্য সৃষ্টি।

শেখ হাসিনা বলেন, এ বিশাল কর্মযজ্ঞ থেকে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছেন আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা। ভবিষ্যতে নিজেরাই এ ধরনের জটিল সেতু বা অবকাঠামো নির্মাণ করতে সক্ষম হব আমরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেতু নির্মাণ যেমন কঠিন ছিল, তেমনি আঁকাবাঁকা, খরস্রোতা উন্মত্ত পদ্মা নদীকে শাসনে রাখাটাও একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জও সফলভাবে মোকাবিলা করে নদীর দুই পাড়কে সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেতুর উভয় দিকে রয়েছে উন্নত ব্যবস্থাপনাসমৃদ্ধ ও দৃষ্টিনন্দন সার্ভিস এরিয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, যা মূল সেতুকে জাতীয় সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সেতুর ৪১টির মধ্যে ৩৭টি স্প্যানের নীচ দিয়ে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেতু নির্মাণ কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে পদ্মা নদীর উভয় পাড়ের তিন জেলা- মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার ৫৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা তাঁর সরকার নিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সহায়তা, ভিটা উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য প্রদান করা হয়েছে কর্মমুখী ও আয়বর্ধনমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ।

প্রধানমন্ত্রী  বলেন, প্রকল্প এলাকায় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় বনায়ন কর্মসূচির পাশাপাশি জীববৈচিত্রের ইতিহাস ও নমুনা সংরক্ষণের জন্য জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সরকার প্রধান বলেন, বহুমুখী এই সেতুর উপরের ডেক দিয়ে যানবাহন এবং নিচের ডেক দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন। সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

এরফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। আশা করা হচ্ছে, এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই-তিন শতাংশের বেশি হারে অবদান রাখবে এবং এরফলে দারিদ্র্য নিরসন হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক। ফলে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিংক। তাই, আঞ্চলিক বাণিজ্যে এই সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া, পদ্মার দু’পারে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

পাশাপাশি, এ বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং ঢাকায় মেট্রোরেল। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হবে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সেটিও ২০২৩ নাগাদ চালু হবে, বলেন তিনি।

প্রধান-মন্ত্রী এ সময় দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি বিশেষের ষড়যন্ত্রে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে বিশ^ ব্যাংকের পদক্ষেপ এবং তাঁকে, তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং মন্ত্রিপরিষদ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়ার অপচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তা মোকাবেলার ইতিবৃত্তও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা পর্যায়ে চক্রান্তকারীদের মিথ্যা ষড়যন্ত্রের কারণে আমার পরিবারের সদস্য ছোটবোন শেখ রেহানা, আমার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ, রেহানার পুত্র পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, আমার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুইয়াসহ কয়েকজন সহকর্মী চরম মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছিলেন। আমি তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ যারা মৃত্যুবরণ করছেন তাদের রুহের মাগফিরাত এবং আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি এই সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ পরার্শক, ঠিকাদার, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি দেশবসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাম করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫  মা’ বাবা, ভাইসহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হারিয়ে ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে জীবন কাটানোর পর ’৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করলে একরকম জোর করে দেশে ফিরে আসেন। তখন এই জনগণই তাঁকে আপন করে নেয়। আর তিনি যখন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন তখনও এই জনগণই এগিয়ে আসে। তাঁকে সাহস ও শক্তি জোগায়। প্রধান-মন্ত্রী বলেন, এই জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা, এই জনগণকে আমি স্যালুট জানাই।

 

 

এ সময় তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তাদের হয়তো চিন্তা-চেতনার দৈনতা রয়েছে। আত্মবিশ^াসের অভাব রয়েছে। আগামীতে তাদের দেশপ্রেম জাগ্রত হবে এবং দেশের মানুষের প্রতি তারা আরো দায়িত্বশীল হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধান-মন্ত্রী।

আরও দেখুনঃ

কাল পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪২৯ সালের প্রথম দিন

বাংলা ১৪২৯ সালের প্রথম দিন আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে কাল যুক্ত হবে নতুন বাংলা বর্ষ ১৪২৯।  বাংলার চিরায়ত উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি আজ। চৈত্র মাসের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তি। আবার বাংলা বর্ষের শেষ দিনও। কাল বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখ-নতুন বাংলা বর্ষ। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু  ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এভাবে বিদায়ী সূর্যের কাছে এ আহ্বান জানায় বাঙালি।

পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রা

কাল পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪২৯ সালের প্রথম দিন

পয়লা বৈশাখ আমাদের সকল সঙ্কীর্ণতা, কুপম-ুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়। অন্য দিকে পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্যাপিত হয় নববর্ষ।

পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রা

কাল পহেলা বৈশাখে দুইবছর পর বর্ণিল উৎসবে মাতবে দেশ। ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী এবং সারাদেশ জুড়ে থাকবে বর্ষবরণের নানা আয়োজন।  ‘বাংলা নববর্ষ ১৪২৯’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দিনটি  সরকারি ছুটির দিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। ছায়ানট রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। এদিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে দেশের সকল জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী র‌্যালি আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রা

বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কর্তৃক বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে নববর্ষ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। সকল সরকারি-বেসরকারি টিভি, বাংলাদেশ বেতার, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং বাংলা নববর্ষের ওপর বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি চ্যানেলসমূহ রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।

এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল স¤্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনার শুরু হয়। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাঁদের পুরানো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তাঁরা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়।

পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রা

মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এসময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।

পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় , উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

আরও দেখুনঃ

পাইকারদের ভিড় কেরাণীগঞ্জে গার্মেন্টস পল্লীতে

পাইকারদের ভিড় কেরাণীগঞ্জে গার্মেন্টস পল্লীতে: রাজধানী ঢাকাসহ  দেশের অভিজাত বিপণী বিতান থেকে ফুটপাতের মার্কেট দখল করে নিয়েছে কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর ও কালীগঞ্জের তৈরি বাহারী রং ও ডিজাইনের আধুনিক সব পোশাক। দামে কম ও কাপড়ের গুনগতমান থাকায় ক্রেতারাও লুফে নিচ্ছেন এ অঞ্চলের তৈরি পোশাক। বিশেষ করে  রমজানের ঈদ এবং শীতের  সময় এ দুই মৌসুমই এখানকার ব্যবসায়ীদের মূল  সিজন। পবিত্র মাহে রমজান চলমান তাই পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দর্জিরা। যদিও বছর জুড়েই চলে নানা ধরনের পোশাক তৈরির কাজ তবে শীত অথবা ঈদ এলেই কারিগরদের হতে হয় গলদঘর্ম।

এখানকার পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের ঈদের পোশাকের প্রায় ৬০ থেকে ৭০শতাংশ পোশাক কেরানীগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না। কালিগঞ্জ , আগানগর ও শুভাঢ্যার বিভিন্ন কারখানায় ঘুরে দেখা গেছে এখানকার তৈরি পোশারে বাজারে রমজানের শুরুতেই ব্যাপক পাইকার সমাগম । তাই দিন-রাত  চলছে বাহারীসব পোশাক তৈরির কাজ। বছর জুড়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এখান থেকে তাদের চাহিদা মাফিক তৈরি পোশাক নিয়ে বিক্রি করে থাকে। তবে বিশেষ করে ঈদ-পূজা  বা শীত মৌসুমে এখানকার ব্যাবসায়ীদের কদর বেড়ে যায় দেশের পাইকারদের কাছে ।

পাইকারদের ভিড় কেরাণীগঞ্জে গার্মেন্টস পল্লীতে

জেলা পরিষদ মার্কেট এর এক্সটা ফ্যাসনের সত্ত্বাধিকারী মো. আরিফ জানান, বিগত দুই বছর করোনা মহামারিতে আমাদের ব্যবসায় প্রচুর লোকসার হয়েছে। এ বছর আল্লাহর রহমাতে ভালো সেল হচ্ছে। পাইকাদের চাহিদা অনুযাই পণ্য সরবরাহ করতে পারছিনা। আসা করি পণ্য ঠিক ভাবে দিতে পারলে বিগত দিনের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবো। এ ব্যাপারে কেরাণীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক হাজী মো.মুসলিম ঢালী বাসসকে বলেন, মূলত শীত ও ঈদ মৌসুমই আমাদের সবচেয়ে বড় মৌসুম ।

তাই পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে এখানকার প্রায় ১০ সহাস্রাধিক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। রোজার মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে তাদের এব্যস্ত সময়। তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাকের মার্কেট এটি। বৈশি^ক মহামারি করোনার প্রভাবে গত রোজার  ও কোরবানীর ঈদে তাদের  ব্যাবসা তেমন ভালো হয়নি। তবে এবছরের পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে ইতো মধ্যেই ক্রেতা সাধারণ ভিড়তে শুরু করেছে আমাদের এ পোশাকের পাইকারী বাজারে।

তিনি বলেন,বিগত বছরগুলোতে বিদ্যুৎ সমস্যার কারনে তাদেরকে অনেক সমস্যায় পড়তে হত। কিন্তু কেরাণীগঞ্জে এখন আর কোন বিদ্যুৎ সমস্যা নেই। যে কারণে তাদের উৎপাদন এবছর আগের তুলনায় অনেকটাই বেশী। তিনি আরো বলেন, যে কোন রুচিশীল তৈরি পোশাক এখানে অত্যন্ত সহজ মূল্যে পাওয়া যাওয়ার কারণে পাইকারদের তেমন বেশী ঘোরাঘুরি করতে হয়না। তা ছাড়া রাজধানীর যে কোন পাইকারী বাজারের তুলনায় আমাদের এখানে কেনাকাটা করে পাইকাররা  কোনরকম যানজট ছাড়াই নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌছতে পারে। যে কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাইকারদের কাছে দিন দিন আমাদের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি হাজী মো.স্বাধীন  শেখ বলেন, এখানে কোন শ্রমিক অসন্তোষ নেই। নেই কোন চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী। নৌ-পথ ও সড়ক পথে দেশের যে কোন অঞ্চলে সহজে যোগাযোগ এবং যানজটমুক্ত এলাকা হওয়ায় দেশের যে কোন এলাকার পাইকাররাই মন খুল্ েপছন্দ মাফিক কেনাকাটার জন্য এখানে আসেন ।

আরও দেখুনঃ 

পণ্যের ডিউটি স্তরে সামঞ্জস্য করা হলে আমদানি বাড়বে ও বর্তমান সংকট কেটে যাবে : চিটাগাং চেম্বারে মতবিনিময় সভায় বক্তাদের অভিমত

ডিউটি স্তরে সামঞ্জস্য : পণ্যে ডিউটি স্তরে সামঞ্জস্য করা হলে আমদানি বৃদ্ধি পাবে এবং বর্তমান সংকট কেটে যাবে। ঈদ উৎসবের প্রায় ৩ থেকে ৬ মাস আগে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে মতবিনিময় আয়োজন করে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। পাইকারি ও খুচরা সবক্ষেত্রে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের তালিকা প্রকাশ এবং উভয়ের মধ্যে দামের পার্থক্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত। পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বিষয়ে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে আজ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

 

পণ্যের ডিউটি স্তরে সামঞ্জস্য করা হলে আমদানি বাড়বে ও বর্তমান সংকট কেটে যাবে : চিটাগাং চেম্বারে মতবিনিময় সভায় বক্তাদের অভিমত

 

সভায় উপস্থিত ছিলেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (এডমিন এন্ড ফাইন্যান্স) মো. ইকবাল হোসেন, পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু রায়হান দোলন, সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারিশ, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ একেএম আক্তার হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. রকিবুর রহমান (টুটুল)।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও চেম্বারের সাবেক পরিচালক ছৈয়দ ছগীর আহমদ, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসএম গ্রুপ চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, আখতারুজ্জামান সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, আন্ত:জিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার সাবেরী, পুলিশ প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সায়েম বক্তব্য রাখেন।

 

চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কোভিড অতিমারির দুই বছর ও সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য পৃথিবীব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন নতুন করে লকডাউন দেয়ার কারণে তৈরিপোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকিমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রদানে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। চিটাগাং চেম্বারও প্রতি বছরের ন্যায় ভর্তুকিমূল্যে চাল, চিনি ইত্যাদি বিক্রয় করছে। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মিলার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা জরুরি।

বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র মিল রয়েছে। কাজেই আমদানি উৎসাহিত করতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে ফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানি করা যায়।

 

 

চেম্বার সভাপতি মিল গেইটে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয়সহ এসও, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে জোরদার মনিটরিং-এর মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কাজ করার কথা জানান। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনে ঘাটতিজনিত অস্বস্তিকর বাজার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভোক্তাসাধারণ যাতে সহনীয় এবং ন্যায্যমূল্যে দ্রব্যমূল্য ক্রয় করতে পারে এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে।

মহাপরিচালক চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস হ্রাসকরণের নিমিত্তে চট্টগ্রাম থেকে আইপি ইস্যু/নবায়ন যাতে করতে পারে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানান। চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হোসেন, পিপিএম বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মহাসড়কে কোন ধরণের হয়রানি যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেকোন অভিযোগ পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।

 

অন্যান্য বক্তারা ফিনিশড প্রোডাক্ট ও আনফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানির ক্ষেত্রে ডিউটি স্ট্রাকচার যৌক্তিকহারে নির্ধারণ, পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা, অতীতের আইনসমূহ যুগোপযোগী করা, চাহিদার পূর্বাভাস প্রাক্কলন, বেশি বেশি আমদানি উৎসাহিত করা, মিল থেকে মেমো অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা, যানজট নিরসন ও অস্থায়ী দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ, আমদানিকারকদের তালিকা প্রস্তুত করা, চাহিদার সঠিক তথ্য সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব প্রদান, তিন মাস আগে শুল্ক সমন্বয় করা, লোকাল এলসি’র ক্ষেত্রে ২ শতাংশ কর প্রত্যাহার করা, নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে সারা বছর ভোগ্য পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখা ইত্যাদি দাবি তুলে ধরেন।

আরও দেখুনঃ 

বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না : ওবায়দুল কাদের

বাংলাদেশের অবস্থা কখনও শ্রীলঙ্কার মতো হবে না বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সব সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না। পদ্মা  সেতু ও মেট্রোরেলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রা বন্ধ করা যাবে না।’ ওবায়দুল কাদের শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের ইউনিটগুলোর নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের

 

বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না : ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলা-দেশের অর্থনীতির সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে তুলনা করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা ষড়যন্ত্রের অংশ। যারা বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলছেন, তারা হয় না জেনে বলছেন, না হয় উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার করছেন।

 

ওবায়দুল কাদের

তিনি বলেন, আমাদের পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আজকে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টার্নেল, মেট্রোরেলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পর এখন তারা লেগেছে বাংলা-দেশ নাকি শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। করোনার সংকট কাটিয়ে আজ তৃণমূল পর্যন্ত বাংলা-দেশের অর্থনীতি ভারসাম্য পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলা-দেশে তেমন কোনো সংকট হয়নি। তাই আমি অপপ্রচারকারীদের উদ্দেশে বলতে চাই, অপপ্রচার করে লাভ নেই। বাংলা-দেশ ইনশাআলাøহ, কখনও শ্রীলঙ্কা হবে না। আমাদের ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট উন্মুক্ত নয়, শ্রীলঙ্কার মতো কেউ ইচ্ছা করলে বিদেশে ডলার পাঠাতে পারবে না। শিক্ষা, চিকিৎসা যেকোনো কাজে বিদেশে টাকা পাঠাতে হলে একাউন্ট ওপেন করে তার পাঠাতে হবে। অনেকে মেগা প্রকল্পের কথা বলেন, পদ্মাসেতু বিদেশি ঋণ নির্ভর নয়। আমাদের টাকায় শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করছেন, বিদেশি ঋণে নয়। কোনো বিদেশি ঋণ নিয়ে এতো বড় মেগা প্রকল্প হয় না। বঙ্গবন্ধুর কন্যা সারা বিশ্বকে দেখিয়েছেন আমরা পারি।

ইউনিট সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চার প্রমাণ দিয়েছে দাবি করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইউনিট সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চার প্রমাণ দিয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারবো। আওয়ামী লীগই বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাবে। অপপ্রচার, চরিত্রহনন করে লাভ নেই। দেশে বিদেশে প্রোপাগান্ডা করে লাভ নেই। আওয়ামী লীগের শেকড় বাংলা-দেশের যত গভীরে, সেটা উপড়ে ফেলা যাবে না।

সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি পরাজিত হয় তাহলে সার্বভৌমত্ব পরাভূত হবে। বিএনপি বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। সব ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। সভা শেষে চলতি বছরের নভেম্বরেই ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৮০২টি ইউনিটের নব নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পদকদের শপথ বাক্য পাঠ করায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।

আরও দেখুনঃ