প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জীবনব্যাপী আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন শান্তির অন্বেষণে নিবেদিত।
জীবনব্যাপী আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন শান্তির অন্বেষণে নিবেদিত : প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে তিনি কলকাতার ভয়াল দাঙ্গার মধ্যে অসহায় বিপদাপন্ন মানুষকে উদ্ধারের জন্য জীবন বাজি রেখে নির্ভয়ে ছুটে গিয়েছেন। নবীন রাজনীতিবিদ হিসেবে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলীয় শান্তি সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
১৯৫৬ সালে বিশ্ব শান্তি পরিষদের স্টকহোম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলার মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এক দশকেরও বেশি সময় জেল খেটেছেন এবং পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনেই ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’ শান্তির এই বাণী ঘোষণা করেছেন।
শান্তির এই প্রতিপাদ্যই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র হিসেবে গৃহীত হয়েছে। তিনি সবসময় এশিয়া-আফ্রিকা-ল্যাটিন আমেরিকাসহ সকল মুক্তিকামী মানুষদের সমর্থন যুগিয়েছেন এবং অবিচল কণ্ঠে শোষিতের পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জুলিও কুরি শান্তিপদক প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং সেই সঙ্গে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করছে জেনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা এনে দিয়ে দেশবাসীর কাছে তিনি যেমন বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা হিসেবে বরেণ্য হয়েছেন, তেমনি শান্তির স্বপক্ষে আপসহীন অবস্থান তাঁকে বিশ্ববাসীর কাছেও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। শান্তি ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্ব শান্তি পরিষদ সর্বোচ্চ সম্মান জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করেছে।
নেলসন ম্যান্ডেলা, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, জওহরলাল নেহেরু, গামাল আবদেল নাসের, পাবলো নেরুদা, মার্টিন লুথার কিং, ইয়াসির আরাফাত, লিওনিদ ব্রেজনেভ প্রমুখ জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্ত বিশ্ববিশ্রুত নামের তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামের সংযোজন প্রমাণ করে বিশ্ববাসীর চোখে আমাদের জাতির পিতার সম্মান ও মর্যাদা হিমালয়সম উচ্চতায় অধিষ্ঠিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ যখন যুদ্ধ এবং নানা রকমের দ্বন্দ্ব-সংঘাত পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, তখন তাঁর শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তির পঞ্চাশ বছরপূর্তি আমাদেরকে এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানব জাতির সামনে শান্তির কোনো বিকল্প নেই।
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জুলিও কুরি শান্তিপদক প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত সকলকে, বিশেষ করে এ স্মরণিকা প্রকাশের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এ স্মরণিকা বিশ্ব শান্তির প্রবক্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আরো নিবিড়ভাবে জানার ক্ষেত্রে উপযোগী হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশবাসীকে তাদের কর প্রদানের আহবান জানিয়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও কর সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
সক্ষম সকলকে কর প্রদানের আহবান প্রধানমন্ত্রীরঃ তিনি বলেন, “ শুধু রাজধানী বা শহরে নয়, সারা দেশে কর দিতে সক্ষম যারা, দয়া করে আপনার কর পরিশোধ করুন। সরকার আপনার পরিষেবা এবং কল্যাণে আপনার অর্থ ব্যবহার করবে।”
রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের প্রথম দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩ উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, “কাজেই, আমাদের সেগুলির (অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার) মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যত বেশি ট্যাক্স সংগ্রহ করব, ততই এটি অতিক্রম করা সহজ এবং সম্ভব হবে।”
প্রধানমন্ত্রী করের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে করদাতার সংখ্যা সম্প্রসারণে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে এবং জনগণকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে সারাদেশে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারনা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক নয় সারা দেশেই আমি সকলকে বলবো যারা কর দেবার সামর্থ রাখেন, আপনারা দয়াকরে কর দেবেন। সেটা আপনাদের সেবায়ই সরকার কাজে লাগাবে।
তিনি বলেন, যেহেতু বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, আজকে প্রতিটা জিনিষের দাম বেড়েছে। আজকে তেল, গ্যাস, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ প্রত্যেকটা জিনিষের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার তা সত্বেও এগুলো অধিকমূল্যে কিনে নিয়ে আসছে।
সেখানে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে , ৮শ’ ডলারের জাহাজ ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮শ’ ডলার । আমরা ভর্তুকি দিয়ে অধিক মূল্যে কিনে এনে তা কমমূল্যে দেশের মানুষকে দিচ্ছি। এক কোটি মানুষ টিসিবির কার্ড পেয়েছে, সখানে ভর্তুতি মূল্যে মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে, কৃষিতে তাঁর সরকার ভর্তুতি দিচ্ছে, করোনাকালিন ব্যবসায়ীদেও শিল্প ও কলকারখানা চালু রাখার জন্য তাঁর সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। এভাবেই সরকার সকলকে দু:সময়ে তাঁর ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন “এখন সরকার যাতে রাষ্ট্র চালাতে পারে বা মানুষের জন্য কাজ করতে পারে সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ ভর্তুকি আমরা আর কত দিতে পারবো। তাছাড়া আমাদের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে ব্যহত না হয় সেদিকেও দেখতে হবো ।”
তিনি আরো বলেন, আপনারা উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে যদি যান, যে পরিবর্তন হয়েছে গত ১৪ বছরের সেই পরিবর্তনটা আপনারা দেখতে পাবেন। এখন আর কেউ কুঁড়ে ঘরে বাস করেনা, ভুমিহীন-গৃহহীন প্রত্যেককে তাঁর সরকার বিনে পয়সায় ঘর তৈরী করে দিচ্ছে। আর্থিক সহাযতা দিয়ে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগও করে দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছে যেখানে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের তৃণমূল পর্যায়েরও উন্নয়ন নীতির কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও অর্থনীতির গতিশীলতা তৈরী হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি যে গত ১৪ বছরে আমুল পরিবর্তন এসেছে। করদানের সক্ষমতা কিন্তু আমাদের উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে। সেখানে আমরা যদি একটু প্রচার-প্রচারণা ভালভাবে চালাই তাহলে মানুষ কিন্তু স্বতস্ফূর্তভাবে আসবে কারণ তারাতো সেবা পাচ্ছে। এই সেবাটা পাওয়ার জন্যই তারা করবে।
প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এবং সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রদ্যুৎ কুমার সরকার।
অনুষ্ঠানে এনবিআরের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনির্মিত ১২ তলা রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন।
ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী এর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনও করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা এখনও অনেক কম। অনেকে একে ঝামেলা মনে করেন বা এজন্য সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানে কোন জোর জুলুম খাটাবেন না। মানুষকে কোন ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে- আপনি যে কর দেন, সেটা কিন্তু আপনার কাজেই লাগে। আজবে রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রীজ বা এই যে পোর্ট, কৃষি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই যেগুলো সরকার করে দিচ্ছে সবগুলোর সুফল ভোগ করছে জনগণ। আর যারা এই সুফলটা ভোগ করছে তাদেরকেও তো কিছু দিতে হবে, রাষ্ট্রতো আর এমনি এমনি সবকিছু দিতে পারেনা। আর অন্যের কাছে আমরা হাতও পাতবো না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যাদের কর ফাঁকি দেয়ার প্রবনতা রয়েছে- সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম হয়ে গেলে, তারা এই ফাঁকিটা আর দিতে পারবে না। এটা হলো বাস্তব কথা সেটাও একটা বিরাট সুযোগ এনে দেবে। মানুষ যাতে কর ফাঁকি না দেয়- সেজন্য আর করের পরিমানটাও এমন রাখতে হবে- যাতে প্রতিটা মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে দিতে পারে। মানুষকে জানাতে হবে, ব্যাপক প্রচার করা দরকার।
করোনা অভিঘাত এবং এর পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মানুষ কিছুটা আর্থিক সমস্যায় পড়লেও, তাঁর সরকারের শাসনামলে সার্বিক আর্থিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আয়কর, কাস্টমস ও মূসক বিভাগকে অটোমেটেড এবং ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে করদাতা, ব্যবসায়ী এবং জনগণকে সহজ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদানের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। করদাতাগণ এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালি ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে কর পরিশোধ করতে পারছেন।
এটার আরো ব্যাপক প্রচারণার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, কোভিড-১৯ অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অবরোধ ও পাল্টা-অবরোধের বাস্তবতায় অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখা ও বেগবান করার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎসই হচ্ছে রাজস্ব আহরণের প্রধান ক্ষেত্র। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় করহার না বাড়িয়ে বরং ক্ষেত্র বিশেষে করহার যৌক্তিকীকরণ করা, করভিত্তি সম্প্রসারণ এবং কর প্রদানে সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই মূল্যস্ফীতিতে করহার আমরা বাড়াতে চাইনা, কিন্তু করদাতার সংখ্যা বাড়াতে চাই সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় বার তাঁর সরকার ক্ষমতায় এসে সকলের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি সকলকে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় এবং তাঁর সরকারই প্রথম চালু করেন যে- প্রত্যেক সংসদ সদস্যকেও আয়কর দিতে হবে। সংসদ সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে আগে কর দিলেও সংসদ সদস্য হিসেবে তাদের কর রেয়াত ছিল। তাঁর সরকারই প্রধানমন্ত্রীরও কর দেয়ার ব্যবস্থা করেন শুধুমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া। ফলে করদাতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ই-টিনধারীদের রিটার্ন প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে সক্ষম করদাতাগণকে কর নেটের আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে আয়কর বিভাগ কর্তৃক নন ফাইলার কোম্পানী-এর রিটার্ন দাখিলের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। করদাতাগণ যাতে ঘরে বসে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন, তার জন্য ই-ফাইলিং ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় অনুসৃত ‘ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্রাকটিসেস’ বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন কাস্টমস আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে তাঁর সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালি ব্যাংকসহ সকল তফসিলি ব্যাংক, বেপজা, সিসিআইএন্ডই, বিআরটিএ, আইএটিএ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ অনেক স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে কাস্টমস বিভাগের কম্পিউটার সিস্টেমের ইন্টারফেসিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
কেবল চট্টগ্রাম নয়, মোংলা বন্দর ও পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরগুলোকেও তিনি এরসঙ্গে সম্পৃক্ত করার আহবান জানান। এরফলে আমাদের বিরাট অংকের রাজস্ব আয় হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, ই-এলসি ব্যবস্থাপনা মনিটরিং, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও মেনিফেস্ট ডাটা শেয়ারিং-এর মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন ও কন্টেইনার ম্যানেজমেন্টও এর ফলে সহজ হয়েছে।
এছাড়া, পেপারলেস কাস্টমস ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো, বন্ড ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয়করণ, অথরাইজড ইকনোমিক অপারেটর ব্যবস্থা, অটোমেটেড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর লক্ষ্যে কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেট স্থাপন ইত্যাদি আধুনিকায়ন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ সকল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে দ্রুততম সময়ে পণ্য খালাস সম্ভব হবে, যা আমদানি-রপ্তানিতে আরও গতিশীলতা আনবে। দ্রুততম সময়ে পণ্য খালাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে টিআরএস (টাইম রিলিজড স্টাডি) সম্পন্ন করা হয়েছে।
দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে পরোক্ষ কর ব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন হিসেবে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে- সরকার প্রধান বলেন, আধুনিক বিনিয়োগ ও রাজস্ব-বান্ধব আইনটি ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। জনগণ এখন অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর নিবন্ধন এবং অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে পারছে এবং ‘ইএফডিএমএস’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যক্ষ কর তথা আয়কর হচ্ছে দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি। আয়কর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা বিধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আহরিত মোট রাজস্বে আয়করের অবদান শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করোনা অতিমারি দুর্যোগের মধ্যেও আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণের গড় প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের অধিক। কল্যাণমুখী ও জনবান্ধব কর আইন প্রণয়ন সমাজে সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার।
কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সার্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব কর নীতি, কর আইনের প্রয়োগ, সামাজিক-অর্থনৈতিক অসমতা দূরীকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সেজন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন বিবেচনায় নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, জনগণ সেদিকে একটু বিশেষভাবে মনোযোগ দিবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ শাসনামলে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন বিবেচনায় নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বানঃ প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) দ্বারা সম্পাদিত ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর রমনা পার্কস্থ রমনার বটমূলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ এবং মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে ১০৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণসহ এই ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং ‘তারা এটা করেছে শুধু এ কারণেই যে, আমরা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। ‘কাজেই দেশ ও দেশের জনগণের জন্য আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা সেই দায়িত্ববোধ থেকেই দেশ চালিয়ে যাচ্ছি।’
সরকার প্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়ে তুলবো। আমরা ই-গভার্নেন্স চালু করবো, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা করা সম্ভব হয়েছে একারনেই যে, দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায়ও আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।
৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে তাঁর সরকার ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে ্উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যাতে পূরণ হয়, তার নিশ্চয়তা রেখেই সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনে যাতে একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ আসে তার ব্যবস্থাও করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকারের উন্নয়ন কেবল রাজধানী কেন্দ্রিক নয়, বরং একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা বা ইন্টারনেট কানেকশন পৌঁছে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপন করে আমরা স্যাটেলাইট যুগেও প্রবেশ করেছি। তাছাড়া ’৯৬ সালে যে বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম মাত্র ১৬শ’ মেগাওয়াট তাকে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি করার পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি তা আবার ৩ হাজারে (মে.ও.) নেমে গেছে।
সেখান থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি ঘরকে আমরা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে পেরেছি। প্রায় ২৪ হাজার মে. ও. বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা মানুষকে দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮শ’ ২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশনের প্রেক্ষিতে বিদুৎ, পানি ও জ¦ালানির ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হবার জন্য তাঁর আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে প্রায় দেড়শ’ ভাগ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমন অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কাজেই এখানেও আমি সবাইকে অনুরোধ করবো বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাই আবার একটু সাশ্রয়ী হবেন।
দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২৩ সালে বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দা প্রত্যক্ষ করবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির পূর্বাভাস উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর এবং প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহবানও পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের খাবার উৎপাদন বাড়াই তবে অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের আঘাত করতে সক্ষম হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও তাঁর সরকারের বাস্তব সম্মত ও সমেয়োপযোগী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও জিডিপিতে গড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সফলভাবে চলছে।
শেখ হাসিনা রাজধানী বাসীর অতীতের পানির কষ্টের কথা স্ম্রণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ঢাকা শহরে সুপেয় পানির বড় অভাব ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই আমরা রাজধানীর সায়েদাবাদ ১,২ ও ৩ সহ বিভিন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টগুলো করে দিয়েছি। কাজেই পানির ব্যবহারেও সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।
তাঁর সরকার সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতাই শুধু বাড়ায়নি তাদের আবাসন স্ুিবধা ৩২ শতাংশে উন্নীত করেছে। এর লক্ষ্য ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার, বলেন তিনি।
হাইকোর্টে এ্যানেক্স ভবন নির্মাণ, আইনজীবীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, জেলায় জেলায় নতুন আদালত ভবন তৈরিসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সমস্যা দূর করার পদক্ষেপের ও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পর এদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে বন্দুকের নল দিয়ে। অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে, ‘মার্শাল ল’ চলেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে দেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত হয়েছিল সেটা ব্যহত হয়ে যায়।
এভাবেই ২১ বছর সরকার পরিচালিত হয়। ফলে মানুষের উন্নয়নের গতিও ব্যহত হয়। অথচ জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের ওপরে তুলে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর এই অগ্রগতি থেমে যায়, কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি দিয়ে কখনো দেশের উন্নয়ন হয় না। আর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেই এই জনগণের কিছুটা হলেও উন্নয়ন করতে পেরেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর যিনি সেনা প্রধান হলেন, তিনিই একদিন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষিত রাষ্ট্রপতি, অনির্বাচিত লোক দিয়ে কখনো দেশের উন্নতি হয় না, এটা প্রমাণিত সত্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে সরকারে আসার পর জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেছি। জনগণের উন্নয়ন অন্তত আমরা করতে পেরেছিলাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাক্ষরতার হার, খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করি। আমাদের যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। বাংলাদেশ ‘২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যদি এই ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ধারা না থাকতো তাহলে এদেশ কিন্তু এতো উন্নত হতে পারত না।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প:
ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য ২০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ (৯০টি ফ্ল্যাট), তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য বহুতল (১৩ তলা) আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (ছয়টি ১৩ তলা ভবনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট), মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট, নোয়াখালী সদরে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ (৯টি ১০তলা ভবনে ৩২৪টি ফ্ল্যাট)।
এছাড়াও রয়েছে ঢাকার রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার লাইব্রেরি ভবন, এনেক্স ভবন এবং অডিটোরিয়াম নবায়নসহ আনুষাঙ্গিক কাজ।
জাতীয় গৃহায়ণ কতৃর্পক্ষের প্রকল্প: মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১০৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট (স্বপ্ননগর-১) নির্মাণ, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১৪তলা বিশিষ্ট ১২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও সিলেটের সুনামগঞ্জে সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন।
রাজউকের প্রকল্প:
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, পলখান উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্বাচল আদর্শ কলেজ ভবন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়ার এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণসহ ২৫টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি শুধু মাত্র প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে যেটা শুধু আমাদের এখনি প্রয়োজনীয় প্রকল্প সেগুলো গ্রহণ করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ কালীন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় সারাবিশ^ এখন হিমসিম খাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশও অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছে। কাজেই আমাদের যেন সেটা করতে না হয় সেজন্যই আমরা কৃচ্ছতা সাধনের ঘোষণা দিয়েছি, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলেছি এবং এই ব্যাপারেও আপনারা সচেতন থাকবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩ উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিসিদের বিবেচনা করতে হবে যখনই কোন প্রকল্প নেয়া হয় সেটা ঐ এলাকার জন্য কতটুকু কার্যকর। এতে মানুষ কতটুকু লাভবান হবে এবং অপচয় কতটুকু বন্ধ করা যায়, সেদিকে আপনাদের নজরদারি থাকা উচিত। যেহেতু একটা জেলার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। স্বাভাবিকভাবে এগুলো আপনারা দেখবেন। কারণ, যত্রতত্র শুধু পয়সা খরচের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা আমি পছন্দ করি না।
সারাদেশে ইভিএম কার্যকরী করতে ৮ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হওয়ায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে সেটা বাদ দেয়ায় বিরোধী দলের ব্যঙ্গোক্তি ‘ও, বাংলাদেশের আর্থিক সংকট’ এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থিক সংকট অবশ্যই সারা বিশ^ব্যাপী আছে। আমাদেরও আছে। কিন্তু এমন পর্যায়ে নাই যে আমরা চলতে পারবো না। আমাদের অগ্রাধিকার আমাদেরই বিবেচনা করতে হবে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।
সরকার প্রধান বলেন, ‘মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আমাদের কৃষি উৎপাদন যাতে বাড়ে সেজন্য যা খরচ লাগে আমরা করবো। অন্য দেশ যা করেনি আমরা বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবলেন, আমি আমাদের জেলা প্রশাসকবৃন্দকে একটা কথাই বলবো আমি আসার (ক্ষমতায়) পর আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাঝে এই যে জনমুখী বা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বা জনগণকে সেবা দেয়ার যে একটা আন্তরিকতা থাকা উচিত সে আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে, এই পরিবর্তন আমি দেখেছি আপনাদের মাঝে। আর সেটা যদি না হতো বাংলাদেশের উন্নয়নের যতটুকু কাজ আমরা করতে পেরেছি বা সফলতা পেয়েছি সেটা সম্ভব হতো না। কারণ, আমরা জনপ্রতিনিধিরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই ক্ষমতায় আসি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবলেন, ’৭৫ এর পর থেকে উর্দি পরে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার মত দুঃসহ অবস্থা দেশে বিরাজমান ছিল, যদিও ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০২২ পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু প্রচেষ্টা চলেছে সেখানেও এবং মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ, অগ্নিসন্ত্রাস বা গাছকাটা মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।
তবে, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। এ কারণে আমদানী নির্ভর পণ্য মূল্য এবং পরিবহন ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। সেক্ষেত্রে আমি সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছতা সাধনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটা পরিহার করতে হবে-আর এভাবে যদি আমরা চলতে পারি তাহলে একটু ধীরগতিতে হলেও উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে পারবো।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহ বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে এবং নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নাঈম মোহাম্মদ মারুফ খান ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজি জেলা প্রশাসকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক উন্নয়নের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, করোনায় চিকিৎসা, টিকাসহ সুরক্ষার জন্য পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। সেটা আমরা করেছি। আমাদের এখন যেটা জরুরি, সেটাকেই অগ্রাধিকার দেবো। আমরা কতকাল আমদানি নির্ভর থাকবো? আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে নিজেরাই উৎপাদন করবো। এক সময় তো ভারতীয় গরু ছাড়া আমাদের কোরবানিই হতো না। এখন হচ্ছে না? হচ্ছে। আমরা এখন নিজেদের উৎপাদনে ওপর নির্ভর।
এসময় কার্গো বিমান কেনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের জন্য কার্গো বিমান কেনার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। কিন্তু অর্থনৈতিক এ অবস্থায় কিনতে পারছি না। ভবিষ্যতে কিনবো পরিকল্পনা আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় জাতির পিতার ভাষণের উদ্বৃতি তুলে ধরে কর্তব্য পালনে সরকারি কর্মচারীদের আরো আন্তরিক হবার আহবান জানান।
জাতির পিতা ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এটাই বাস্তব কথা যে, আপনাদের জনগনের সেবক হতে হবে। আমরাও যে জনপ্রতিনিধি হিসেবে যতটুকু সুযোগ-সুবিধা পাই বা আপনারা সরকারি আমলা হিসেবে যে সুযোগ-সুবিধা পান এগুলোর অবদান কিন্তু জনগনের। কারণ, জনগণের অর্থ এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকাতেই সবকিছু চলে। এর জন্য আমরা একেবারে তৃণমূল থেকে জনগণকে শক্তিশালী করে আনতে চাই। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রক্েল্পর মাধ্যমে প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষকে আমরা শহরের সুবিধা দিয়ে দিতে চাই। এতে শহরমুখি প্রবণতা কমার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে অর্থনৈতিক প্রাণ চাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রমাণ করেছে যে, সে প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয় নাই।
তিনি বলেন, ‘সকলের মাঝে এমন একটা মানসিকতা ছিল যে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারবো না। তাদের কথা শুনেই আমাদের সব করতে হবে হবে কেন? তারা আমাদের দেশ সম্পর্কে কতটুকুই বা জানে। কাজেই আমাদের নিজেদের চিন্তা নিজেদেরই করতে হবে। আর এই একটা সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ঐতিহামিক ৭ মার্চের ভাষণের মূল মন্ত্র কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা’ এর উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশকে যে এখন আন্তর্জাতিক বিশে^র কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবেনা, এটা সকলে বুঝে গেছে।
ডিসিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ দফা নির্দেশনা:
১.খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। পতিত জমিতে ফসল ফলাতে হবে। কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে লক্ষে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে;
২.নিজেরা বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং জনগণকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৩.সরকারি অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘেœ যথাযথ সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত;
৪.সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে;
৫.এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে;
৬.দেশে একজনও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। জমি ও ঘর প্রদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে;
৭.শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে;
৮.কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহ যেন কার্যকর থাকে তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে;
৯.শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীল চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে;
১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে;
১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে;
১২. সরকারি দপ্তরসমূহের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। নিজ নিজ জেলার সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে হবে;
১৩. জনসাধারণের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে;
১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনোভাবেই অবনতি না হয়, সেদিকে নজরদারি জোরদার করতে হবে;
১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে;
১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করতে হবে। নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় সে জন্য সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। যুব সমাজকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে;
১৭. বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে;
১৮. বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে, কৃত্রিম সঙ্কট রোধকল্পে ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে;
১৯ সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে;
২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। স্লুইচগেট বা অন্য কোনো কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে;
২১. বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে;
২২. পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে;
২৩. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার, বিপণন এবং ব্রান্ডিং করতে হবে;
২৪ জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয়, সে লক্ষে মনিটরিং জোরদার করতে হবে;
২৫. জেলার সকল সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমসমূহ যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংসদে বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে কোনো শর্তে ঋণ নিচ্ছে না বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ‘আইএমএফ কেবল তখনই (যে কোন দেশকে) ঋণ দেয় যখন দেশটি ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। আমরাতো তেমন কোনো শর্তে ঋণ নিচ্ছে না।’
আইএমএফ থেকে কোনো শর্তে ঋণ নিচ্ছে না বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
একটি পয়েন্ট অব অর্ডারের উপর ভিত্তি করে, মুজিবুল হক বলেন, বাংলাদেশ এখন আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে কিছু শর্ত পূরণ করছে এবং ইতিমধ্যে বিদ্যুতের শুল্ক বাড়িয়েছে এবং ঋণের কারণে গ্যাসের শুল্ক বৃদ্ধি করবে, যা পণ্যের দাম এবং মূল্যস্ফীতির দিকে নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হলো পৃথিবীর কোন দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না।’
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় জাতীয় পার্টির সাংসদের আলোচ্য প্রশ্নের জবাবে কিছু ব্যবসায়ী ও শিল্পকারখানার মালিকদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চাইলে যে মূল্যে কিনে আনবো সেই মূল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।
তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর ইংল্যান্ড বিদ্যুতের দাম ১৫০ ভাগ বাড়িয়েছে। আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ালাম আর বাল্কে কিছু গ্যাসের দাম বেড়েছে। এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলারে। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকি দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য আজেকে সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের যারা আমরা তাদের জন্য টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়ে দিয়েছি। যেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। তেল, চিনি, ডাল সীমিত আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। এর থেকে যারা নিম্ন আয়ের তাদের জন্য আমরা ১৫ টাকায় চাল দিচ্ছি। সেই সঙ্গে তেল, ডাল ও চিনিও দেয়া হচ্ছে। আর একেবারে হতদরিদ্র যারা কিছুই করতে পারে না, তাদেরকে বিনাপয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে কষ্টে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রেখে এই ব্যবস্থা করছি। কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইংল্যান্ডের মত জায়গায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। এটা একটা উন্নত দেশের কথা বললাম। পৃথিবীর সব দেশে এই অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থায় পড়েনি।
ভর্তুকি প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ; বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে যদি ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয় তাহলে সেটা কী করে দেবো? এর ফলে দাম বাড়লে মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রন করার যে চেষ্টা সেটা করে কিছুটা সফলতা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মুল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।
সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের দাম যদি বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি মানুষ যদি একটু সাশ্রয়ী হয় তবে গায়ে লাগবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়- তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে পারে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী আছেন, এখানেও (সংসদে) আছেন তাদের আমি তো স্পষ্ট বলেছি। গ্যাস আমি দিতে পারবো- কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসলাম সেই মূল্য যদি আপানারা দেন আমরা গ্যাস দিতে পারবো। তারা যদি নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায় তাহলে যে মূল্যে কিনে আনবো সেই মূল্য তাদের দিতে হবে।
ভর্তুকি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটা ভুলে যাবেন না ভর্তুকির টাকা তো জনগণেরই টাকা। যত মুল্য কম থাকে তাদের অর্থাৎ আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। যারা সাধারণ মানুষ তারা কিন্তু ঠিকমত বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম আয়েশ করবে আর স্বল্প মুল্যে পাবে তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠার জন্য এখন থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট।
তিনি বলেন, এ চারটি স্তম্ভের আলোকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য বাস্তবায়নে কানেক্টিভিটি (অবকাঠামো উন্নয়ন), মানব সম্পদ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ এবং ইভেন্ট ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সফলতার ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিল্প, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আর্থিক খাত, ইত্যাদির দক্ষতা বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে নেয়ার লক্ষে পাঁচ মন্ত্রী, এক প্রতিমন্ত্রীসহ ৩০ সদস্য বিশিষ্ট স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করে গত বছরের ১৬ আগস্ট গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠার জন্য এখন থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া, এদিন সংসদে সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের দীর্ঘ ১৭ পৃষ্ঠার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সরকার জোর দেওয়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।