গোপালগঞ্জে কোটালীপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন সুবিধাভোগীরা

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরঃ জেলার কোটালীপাড়া রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা মিলে অনিল দাস (৭৫) ও তার স্ত্রী সুমালা দাস দম্পতির। এ দম্পত্তিকে অনেকটা ফুরফুরে  মোজাজে  খোশগল্প করতে দেখা যায়। তাদের কাছে নতুন আবাসস্থলের সুবিধা অসুবিধার কথা জানতে চাইলেই তারা বলেন, ‘বাবা অনেক ভালো আছি। শেখ হাসিনা এ বৃদ্ধ মানুষটাকে জায়গা দিয়ে একটা পাকা ঘর করে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ দিয়েছেন। পাকা পায়খানা, পানীয়জলের সুবিধা। রয়েছে একটা রান্না ঘরও।  গোসলের জন্য ঘাটলাও করে দিয়েছেন। মা বাবা আমাকে যা দিতে পারেনি বা আমি এ ৭৫ বছর বয়সে আয় রোজগার করে যা করতে পারিনি সেই কাজটি আমার আরেক মা শেখ হাসিনা করে দিয়েছেন।

গোপালগঞ্জে কোটালীপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন সুবিধাভোগীরা

 

আমি  আমার এ মায়ের কছে চিরকৃতজ্ঞ। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এর ঋণ কোন দিন শোধ করতে পারবো না। শুধু এ টুকুই বলবো ঈশ্বর যেন আমার হাসিনা মাকে দীর্ঘায়ূ দান করেন।  শুধু অনিল দাস ও তার স্ত্রীই নয় আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ এর আওতায় ৮শ ৪৮টি ও প্রকল্প-২ এর আওতায় ৫শ ৮৫টি পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেয়া ঘরে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছেন।

মুজিব জন্মশতর্বষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর -১ ও ২ এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য এসব বসতঘর নির্মাণ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। প্রতিটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বসতঘরে দুটি কক্ষ, একটি টয়লেট, রান্নাঘর, কমনস্পেস, একটি বারান্দাসহ বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা রয়েছে।গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বৃদ্ধ অনিল দাস (৭৫) ও তার স্ত্রী সুমালা দাস (৫৫)। তাদের ঠিকানা হয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের দেবগ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। আগে রাধাগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মান্দ্র রাধাগঞ্জ খেয়া নৌকার মাঝি ছিলেন তিনি। মানুষ পারাপার করা ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। এ দিয়ে চলতো তাদের ছয় সদস্যের সংসার।  জায়গা জমি না থাকায় ঘাটের পাশে হারান সাহার বাড়িতে এক হাজার টাকা ভাড়ায় একটি ঘরে ছিলো তাদের বসবাস।

একমাত্র ছেলে বিয়ের পর পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বরিশালে। সে এখন মা বাবার খোঁজ খবর রাখে না। চার মেয়ে। সবারই বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে ছোট মেয়েকে এসএসসি পাস করিয়েছিল। সে এখন সাতক্ষীরায় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরী করেন। সে তার বৃদ্ধ মা বাবার ভরনপোশনের জন্য কিছু টাকা দেন। তাই দিয়েই চলে তাদের সকল খরচ।

এক সময় যাদের ঠাঁই হয়েছিল অন্যের ভাড়া ঘরে। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের ঘরে বসবাস করছেন। মাথা থেকে দূর হয়েছে ভাড়ার টাকা আর কি খাবো আর কিভাবেই বা চলবো এ চিন্তা। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) মোঃ ওসমান গণি   সাংবাদিকদের জানিয়েছেন গোপালগঞ্জের ৫টি উপজেলায় প্রকল্প-১ ও ২ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ২ হাজার ১৩ টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়।

ইতোমধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা করে প্রকল্প-১এ ৮শ ৪৮ টি ও ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা করে প্রকল্প-২এ ৫শ ৮৫টি ঘর সুবিধা ভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে ৪শ ২৬টি ঘরের। আর মাটি ভরাট করা হয়েছে ১শ ৫৪টি ঘরের । আশ্রয়ণ পল্লীর বাসিন্দা কামাল সিকদার  বলেন, ত্রিশ বছর আগে রোজগারের আশায় বাড়ি থেকে বের হয়েছি। দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে রিকশা -ভ্যান চালিয়ে পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। বছর দশেক আগে কোটালীপাড়া এসে অটোরিকশা চালাই।

গোপালগঞ্জে কোটালীপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন সুবিধাভোগীরা

 

একসময়  মাথাগোঁজার ভালো কোনো ঠাঁই ছিল না। অন্যের জমিতে কুঁড়েঘরে কোনোরকম দিনযাপন করেছি। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী আমাকে জমিসহ সেমিপাকা ঘর দিয়েছেন। এখন আমি ঘর ও জায়গার মালিক। বরাদ্দ পাওয়া এসব ঘরে টয়লেট, বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা থাকায় আমাদের কোন ভোগান্তি হচ্ছে না। বিদ্যুতের আলোয় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনাও করতে পারছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী আরিকুল মোল্লা বলেন, স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্যের জমিতে ঝুপড়িঘরে বসবাস করতাম। বিভিন্ন দুর্যোগ মাথায় নিয়ে কাটিয়ে দিতে হতো বছরের অর্ধেক সময়। সড়ক দুূর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে যাওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তি করে এখন সংসার চালাতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ পল্লীতে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। নতুন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ঠিকানায় স্ত্রী পরিজন নিয়ে অনেক সুখেই আছি আমরা। এ জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং তাঁর দীর্ঘ জীবন কামনা করি।

একই পল্লীর বাসিন্দা বিধবা ছায়া রানী বিশ্বাস (৫৫) বলেন, স্বামী সুবল বিশ্বাস ছিলেন কাঠ মিস্ত্রী। পাঁচ মেয়ে রেখে বিগত সাত বছর আগে মারা যান তিনি। তখন মেয়েদের নিয়ে দুর্বিসহ দিন কাটাতে হয়েছে। এর মধ্যে ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বাকী দুই মেয়ে এখনও অবিবাহিত। তাদের টিউশনির টাকায় চলে সংসার খরচ। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আমাকে জায়গাসহ ঘর দিয়েছেন তাতে আমার মহাউপকার হয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে থাকার একটা ঠিকানা হলো। নতুন ঠিকানার সুন্দর পরিবেশ আমার অনেক ভালো লাগছে। এখানে রয়েছে ছেলে মেয়েদের জন্য লাইব্রেরি, খেলার জন্য দোলনা, বসার স্থান, পাশে রয়েছে নদী ও বিল। অবসরে যখন ঘুরতে বের হই তখন মনটা ভালো হয়ে যায়।

দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পুরাতন মানিকদাহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু আবতাব বিশ্বাস (৩৬), চরগোবরা গ্রামের কৃষক হেদায়েত সিকদার (২২) ও পুরাতন মানিকদাহ গ্রামের দিনমজুর টিক্কা শেখ (৪৫), নিজড়া ইউনিয়নের মালেঙ্গা গ্রামের রিকশাচালক রমিছ মোল্লা (৫২), দিনমজুর আরজু ফকির (২৬), করপাড়া গ্রামের ঝিয়ের কাজ করা মর্জিনা বেগম (৫০), কৃষক আব্দুর রাজ্জাক মিয়া (৮০)সহ অসংখ্য সুবিধাভোগী।

গোপালগঞ্জে কোটালীপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন সুবিধাভোগীরা

 

তারা জানিয়েছেন, আমরা নিম্ম আয়ের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন চালাই। এ কারণে জমি কেনাতো দূরের কথা ঘর বানানোর স্বপ্নও কখনও দেখতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিয়েছেন এতে আমরা মহাখুশী । ওনার জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছু করার নাই। তাই যতদিন বাঁচবো নামাজ পড়ে শেখ হাসিনার জন্য মোনাজাত করবো। উনি যেন সুস্থ থাকেন  ভালো থাকেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ দেখতে সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গেলে কথা হয় সুবিধাভোগীদের সঙ্গে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কেমন হয়েছে ? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমরা যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছি তার নির্মাণ কাজ ভালোই হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোন অসুবিধা মনে হচ্ছেনা। তবে কিছু দিন আগে যে প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল সে সময় ঘরের পাশের মাটি ধুয়ে গেছে। পরে সেটা আমরা  ঠিক করে নিয়েছি। গ্রাম এলাকায় নতুন মাটির উপর ঘর করলে মাটি একটু ধুয়ে যায়। এছাড়া আর কোন সমস্যা নেই।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ২ হাজার ১৩টি ঘরের মধ্যে ১ হাজার ৪শ ৩৩টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।  হস্তান্তর হওয়া ঘরের মধ্যে অতিবৃষ্টির কারণে  মাত্র দুইটি ঘরের বারান্দার নিচের মাটি সরে মেঝেটা ফেটে গিয়েছিল। সেটা আবার মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকা ঘুরে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সকল সুযোগ সুবিধা  নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন গোপালগঞ্জে যেসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে তা অনেকটা মানসম্মত। কোন প্রাকৃতিক দুূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বসবাসকারীরা বহু বছর ব্যবহার করতে পারবেন।