দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের সহজ লভ্যতা মানুষের আয়বর্ধক কর্মকান্ড বাড়াচ্ছে

প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের সহজ লভ্যতাঃ রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম পেশায় একজন কুমার। বাড়িতে বিদ্যুৎ পেয়ে তিনি বেজায় খুশি। এখন রাতের বেলায় বিদ্যুতের আলোতে তার ছোট্ট ঘরে বসে মাটির খেলনা বানানোসহ নানা আয়বর্ধক কাজে তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়।

 

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের সহজ লভ্যতা মানুষের আয়বর্ধক কর্মকান্ড বাড়াচ্ছে

 

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের সহজ লভ্যতা মানুষের আয়বর্ধক কর্মকান্ড বাড়াচ্ছেঃ খায়রুল বলেন, ‘আমি মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতে পছন্দ করি। বিদ্যুৎ আসার আগে এভাবে কাজ করার কথা ভাবতেও পারতাম না। এখন সুইস টিপলেই আলোর ঝলকানিতে চারদিক ভরে ওঠে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের (চরবাসী) কথা ভেবে এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ।’ বিদ্যুতের জন্য প্রতিটি মানুষই খুশি।

আরেক ব্যক্তি মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস করেন যে, বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবে। কারণ, নিম্ন আয়ের মানুষ বিদ্যুতের আলো ব্যবহার করে তাদের ঘরে বসেই আয়বর্ধক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হচ্ছে।

সরকার শতভাগ জনসংখ্যাকে বিদ্যুতের আওতায় আনায় গত বছর বাংলাদেশ আরেকটি মাইলফলক অর্জন করেছে।

বাসস’র সাথে আলাপকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ও চর এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ওইসব এলাকায় গ্রিড সুবিধা না থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কিছু জায়গায় নদীর পানির নীচ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এভাবে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী এবং নোয়াখালীর হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুত লাইন নিয়েছি।

 

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের সহজ লভ্যতা মানুষের আয়বর্ধক কর্মকান্ড বাড়াচ্ছে

 

নসরুল বলেন, ‘কিছু এলাকা খুব দুর্গম হওয়ায় সে সব এলাকার মানুষকে সৌর বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। এভাবেই বাংলাদেশ শতভাগ জনসংখ্যাকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’

প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ মনে করে, তাদের জন্য বিদ্যুৎ গুরুত্বপূণর্, কারণ, তারা বিদ্যুতের আলো ব্যবহার করে রাতেও কাজ করতে পারে। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ দিনের আলোতে কাজ করলেও বিদ্যুৎ পাওয়ার পর তারা বিভিন্নভাবে অন্যান্য আয়বর্ধক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হচ্ছে।

বিদ্যূৎ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার মতে, সরকার ২০১৬ সালে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিআরইবি) অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ কর্মসূচিও চালু করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত ১৪ বছরে বিদ্যুৎ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালের ৪,৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ২৫,৭৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। আর সর্বাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৪,৭৮২ মেগাওয়াটে (১৬ এপ্রিল-২০২২) উন্নীত হয়েছে। যা ১৪ বছর আগে ৩,২৬৮ মেগাওয়াটের তুলনায় চারগুণ বেশি।

 

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের সহজ লভ্যতা মানুষের আয়বর্ধক কর্মকান্ড বাড়াচ্ছে

 

এছাড়াও, বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে যে, দেশে বিশ্বের বৃহত্তম অফ-গ্রিড সৌর বিদ্যুৎ কর্মসূচি রয়েছে, যা অন্যান্য দেশের জন্য পরিচ্ছন্ন এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুতের সুবিধা সম্প্রসারণের শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে।  সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এই কর্মসূচির আওতায় ২০ মিলিয়ন বাংলাদেশীকে বিদ্যুৎ সুবিধা গ্রহণে সক্ষম করা হয়েছে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ২০০৯ সালে জনসংখ্যার মাত্র ৪৭ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করত। এই সময়ের মধ্যে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট ঘন্টা থেকে দ্বিগুণেরও বেশি  বেড়ে ৬০৮.৭৬ কিলোওয়াট-ঘণ্টা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৯১১.৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির  উৎসের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সৌর, বায়ুু, জল এবং বর্জ্য নিয়ে গবেষণা চলছে।’

এর আগে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক এম তামিম ১০০ শতাংশ কভারেজকে দেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করে বলেন,‘এটি একটি ভালো অর্জন’।

 

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতেদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের সহজ লভ্যতা মানুষের আয়বর্ধক কর্মকান্ড বাড়াচ্ছের সহজ লভ্যতা মানুষের আয়বর্ধক কর্মকান্ড বাড়াচ্ছে

 

নসরুল হামিদ বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের জীবাস্ম জ্বালানীর পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। লক্ষ্য অর্জনে এটি গত এক দশক ধরে কাজ করেছে।

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম-জ্বালানি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

২০৪১ সালের মধ্যে দেশের মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

আরও দেখুনঃ