নগরীতে প্রায় ১০ বছর ধরে ফেলে দেয়া পরিত্যক্ত কাগজ দিয়ে বোর্ড পেপার তৈরী করে স্বাবলম্বী হয়েছে বোরহান উদ্দিন ও শাহিন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)-এর কাউন্সিলরসহ একাধিক স্থানীয় বিশিষ্টজন জানান, বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে নগরীর ২৮নং ওয়ার্ডের মহানগর কলেজ সংলগ্ন বোরহান উদ্দিন ও শহিন সেরনিয়াবাত নিজ উদ্যোগে এই বোর্ড পেপার তৈরী করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
Table of Contents
পরিত্যক্ত কাগজ দিয়ে বোর্ড তৈরী:বোরহান উদ্দিন ও শহিন দীর্ঘদিন যাবৎ ফেলে দেয়া পরিত্যক্ত কাগজ আর কুড়ানো কাগজ থেকে তৈরি করছে নতুন বোর্ড কাগজ। বই, খাতা কাভার, বাইন্ডিং, মিষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্যাকেট তৈরী হচ্ছে এই বোর্ড দিয়ে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এই বোর্ড কাগজ বরিশাল জেলার চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। এ খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয় বহু নারী পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সাফল্য দেখে অনেকেই পরিত্যক্ত কাগজ দিয়ে বোর্ড কাগজ তৈরী শুরু করেছেন।
এই কারখানাটি ছাড়াও নগরীর কাউনিয়া বিসিক এলাকায় আরো একটি কারখানা গড়ে উঠেছে। পুরাতন খবরের কাগজ, প্রেসপট্টির ছাট কাগজ, বাসাবাড়ি থেকে সংগৃহীত পুরাতন বই, কাগজ ও ছিন্নমূল মানুষদের কুড়ানো কাগজ ক্রয় করেই তৈরি হচ্ছে বোর্ড কাগজ। এসব কারখানায় তৈরীতে পুঁজি কম লাগে আর কাঁচামালও সহজে পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বিআর বোর্ড কাগজ কারখানার মালিক বোরহান উদ্দিন বলেন, রাজধানী ঢাকার একটি কাগজ কারখানায় ঘুরতে গিয়ে তিনি দেখেন এই বোর্ড কাগজ তৈরী কারখানা।
এরপর বরিশালে এসে চাকরির অপেক্ষা না করে বন্ধু শাহিন সেরনিয়াবাতকে সঙ্গে নিয়ে স্থাপন করেন নতুন বোর্ড কাগজ তৈরী মেশিন।
বোরহান উদ্দিন বলেন, ২০১১ সালের মার্চ মাসে নিজ জমিতে মাত্র ৩ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন বোর্ড কাগজ তৈরী। হাতে শুকানো এই বোর্ড কাগজের ব্যবসা বছরের ৬ মাস করা যায়। বর্ষার দিনে মাঠে শুকানো যায় না। বর্তমানে প্রায় ৩০ জন শ্রমিক রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শাহিন সেরনিয়াবাত বলেন, কারখানা স্থপন শুরুর দিকে অর্থ জোগান দিতে বহু বেগ পেতে হয় আমাদের। বহু কষ্টে ধার দেনা করে শুরু করি ব্যবসা।
বর্তমানে মাসে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করি। ব্যবসার প্রসার ঘটাতে কিছু দিন পূর্বে একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করেছি।
শাহিন সেরনিয়াবাত বলেন, বিদ্যুৎতের মাধ্যমে কারখানা চালাতে গিয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। সরকার এসব কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারলে আরো দ্রুত প্রসার ঘটতো এই ব্যবসার।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ২৮ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন বলেন, ফেলনা কাগজ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে ওঠা নি:সন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক।
কাগজের ব্যবহারও পরিবেশ বান্ধব। পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য দেশে কাগজের ব্যবহার রয়েছে। কাগজ ছাড়া সভ্যতাকে কল্পনা করা যায় না। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এ সব শিল্প উদ্যোক্তাদের সকল প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করা হবে।
এ ব্যপারে বরিশাল বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা মো. গোলাম রসূল (রাসেল) বলেন, এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা প্রদান করছে বিসিক, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সুবিধা দিয়ে তাদের এগিয়ে নিতে বিসিক কাজ করছে।
বরিশালে গড়ে উঠা পরিত্যক্ত কাগজ দিয়ে বোর্ড তৈরীর কারখানায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে অনেক নারী-পুরুষে, এতে স্বচ্ছলতা এসেছে তাদের পরিবারে। লাভ জনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে এ কারখানা স্থাপনে।
আরও দেখুনঃ
Comments are closed.