মশার হাত থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায়! , বর্তমানে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে মশার উপদ্রব। আকারে অতি ক্ষুদ্র হলেও এই পতঙ্গটি এর যন্ত্রণায় রাতের ঘুম হারাম অনেক মানুষদের । শুধু কি তাই, দিনের বেলায়ও এখন এর যন্ত্রণা থেকে কেউ রক্ষা পায় না। এতটুকু হলেও দুশ্চিন্তা মুক্ত ভাবে থাকা যেত। কিন্তু বিরক্তিকর এই উপদ্রবের পাশাপাশি মশা বহন করে নানা ধরনের সংক্রামক জাতীয় রোগজীবাণু। যা অনেক সময় মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে যেতে পারে।
Table of Contents
মশার হাত থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায়! চলুন জেনে নেওয়া যাক:
১. লেবু আর লবঙ্গের ব্যবহার
লেবু খণ্ড করে কেটে ভেতরের অংশের ভিতর অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন, এটি মশার তাড়ানোর জন্য কাজে দেয়। লেবুর মধ্যে লবঙ্গের পুরোটা ঢুকাবেন শুধুমাত্র লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ যেন বাইরের দিকে থাকে সেইভাবে রাখতে হবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে ঘরের যেকোনো একটি কোণায় রেখে দিন। ব্যস, এতে বেশ কয়েকদিন মশার উপদ্রব আপনার ঘর থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এই পদ্ধতি সকল এর জন্য ঘরের মশা একেবারেই ঠিকমত দূর হয়ে যাবে। আপনি চাইলে লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে জানালার সঙ্গে গ্রিলেও ঝুলিয়ে রেখে দিত পারেন। এতে করে মশা ঘরের মধ্যেই ঢুকতে পারবেআ না।
২. নিমের তেলের ব্যবহার
নিমের মাধ্যেম মশা তাড়ানোর বিশেষ একটি গুণ রয়েছে। নিমের তেলও ত্বকের জন্যও বেশ ভালো। তাই একসাথে দুটির উপকার ভালোভাবে পেতে ব্যবহার করতে পারেন নিমের তেল। সমপরিমাণ নিমের তেল আর নারকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে ঠিকমত লাগিয়ে নিন। দেখবেন মশা আপনার ধারে কাছে একদম ভিড়বে না এবং সেই সাথে ত্বকের সকল অ্যালার্জি, ইনফেকশন জনিত নানা সমস্যাও দূর হবে।
৩. পুদিনার ব্যবহার
ছোট গ্লাসে একটু পরিমানে পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলের মধ্য। ৩ দিন অন্তর পানি বদলে দিয়ে দেবেন। জার্নাল অফ বায়োরিসোর্স টেকনোলোজির গবেষণা এর মতে তুলসির মতো পুদিনা পাতারও রয়েছে যা মশা দূরে রাখার ক্ষমতা। শুধু মশাই নয় পুদিনা পাতার গন্ধ অনেক ধরণের পোকামাকড়কেও ঘর থেকে দূরে রাখে। পুদিনা পাতা ছেঁচে নিয়ে পানিতে ফুটান তারপর রেখে নিন। এই পানির ভাপ পুরো ঘরে খুব ভালোভাবে ছড়িয়ে দিন। দেখবেন ঘরের সব মশা পালিয়ে যাবে। চাইলে আপ পুদিনার তেলও গায়ে মেখে নিতে পারেন।
৪. ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা আর নিমপাতার গুঁড়ো
প্রতিদিন নিশিন্দা আর নিমপাতার গুঁড়ো ধুনোর সাথে ব্যবহার করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৫. হলুদ বৈদ্যুতিক আলো
ঘরের মধ্যে মশার সব উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের মধ্যে থাকা বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো তৈরি হবে। দেখবেন মশা কমে যাবে, কারণ মশা এই হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়। এছাড়া ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে লাইট বাল্বগুলো পরিবর্তন করুন। মশারা সাধারণত সকল লাইটের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এলইডি লাইট, হলুদ ‘বাগ লাইট’, বা সোডিয়াম লাইট এক্ষেত্রে উপকারী হতে পার। এগুলো জ্বালালে সন্ধ্যাবেলা ঘরে বাইরে মশাদের আক্রমন অনেকটাই কমে যেতে থাকবে।
৬. চা-পাতা পোড়ান
ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে সেটি রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ওই চা পাতাগুলো ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছিসহ অনেক পোকা পালিয়ে যাবে।
৭. নিমপাতা পোড়ান
কয়লা অথবা কাঠ-কয়লার আগুনে নিমপাতা পোড়ালে যে ধোঁয়াগুলো তৈরি হবে সেগুলো মশা তাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর হবে।

৮. ক্যাটনিপ অয়েল
ক্যাটনিপ অয়েলের nepetalactone নামক একটি পদার্থ মশা তাড়াতে DEET (Diethyle-Meta-toluamide) থেকে প্রায় ১০ গুন বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে । ক্যাটনিপ অয়েল শরীরে মাখালে মশারা ধারে কাছেও ঘেঁষবে না।
৯. বারান্দায় চামচিকার বাক্স রাখুন
ভয় পাওয়ার তেমন কিছু নেই। চামচিকারারা এক ঘন্টায় কয়েকশত এর মত পোকা-মাকড় খায়। তাই মশা তাড়াতে ব্যাট হাউস তৈরি করতে পারেন। বারান্দায় কিংবা ভেন্টিলেটরের কাছে রাখুন এই ব্যাট হাউস আর চামচিকাদের কাজ করতে দিন।
১০. ফ্যান চালু রাখুন
মশারা খুবই হালকা পতঙ্গ। অন্যদিকে একটি ফ্যানের স্পীড ঘন্টায় প্রায় দুই মাইল এর কাছাকাছি হয়ে থাক। মশাদের উড়বার গতিবেগের চাইতে ফ্যানের ঘুরবার গতি অনেক পরিমানে বেশি হওয়াতে সহজেই মশাদের ফ্যানের ব্লেডের কাছে টেনে নেয়। আপনার বসার স্থান কিংবা ডেক অথবা যেসব স্থান থেকে মশারা খুব সহজে আপনার গৃহের মধ্যে সহজে প্রবেশ করতে পারে, এমনসব স্থানে মশারা তাদের আগমন এর সময়ে আপনার টেবিল ফ্যান অথবা পেডাল ফ্যানটি চালু করে রেখে দিন। মশাদের হাত থেকেও যেমন নিস্কৃতি পেয়ে যাবেন তেমনি গরমের হাতেও পাবেন আরাম।
১১. কালো, নীল আর লাল কাপড় এড়িয়ে চলুন
মশাদের পছন্দের রঙের পোষাকগুলো এড়িয়ে চলুন। কি অবাক হচ্ছেন! হ্যাঁ কিছু কিছু প্রজাতির মশারা কয়েকটি গাঢ় রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে যেমন কালো, নীল আর লাল। আর তারা গরমের প্রতিও একই সংবেদনশীল। তাই ঠান্ডা রাখুন আপনার ঘর আর পোষাক পড়ুন হালকা রঙের।
১২. কর্পূরের ব্যবহার
মশারা কর্পূরের গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আপনি যে কোন ফার্মেসিতে গিয়ে কর্পূরের ট্যাবলেট কিনে নিয়ে নিতে পারেন। একটি ৫০ গ্রামের কর্পূরের ট্যাবলেট একটি ছোট বাটিতে রেখে বাটিটি পানি দিয়ে পূর্ণ করে ফেলুন। এরপর এটি ঘরের যেকোনো কোণে রেখে দিন। তাৎক্ষণিকভাবেই মশা দেখবেন গায়েব হয়ে যাবে। দুই দিন পর পানি পরিবর্তন করে নিবন আর আগের পানিটুকু ফেলে দিবেন না। এই পানি ঘর মোছার কাজে ব্যবহার করলে আপনার ঘরে পিঁপড়ের যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি পাবেন।
১৩. সুগন্ধি ব্যবহার করুন
মশারা সুগন্ধি থেকে দূরে সরে জায়। সুতরাং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে আতর, সুগন্ধি যেকোনো কিংবা লোসন মেখে শুতে পারেন। নিশ্চিত করে বলা যায় এতে আপনার ঘরে মশা সাধারণ থেকে অনেক কম দেখা যাবে।

১৪. রসুনের স্প্রে করুন
রসুনের স্প্রে মশা তাড়াতে খুবই পরিমানে একটি কার্যকারী প্রাকৃতিক উপায়। ৫ ভাগ পানিতে ১ ভাগ রসুনের রস মিশিয়ে ফেলুন। মিশ্রণটি একটি বোতলের মধ্যে ভরে শরীরের যেসব স্থানে মশারা কামড়াতে পারে সেসব স্থানে স্প্রে করুন। এতে করে যে কোন ধরণের রক্ত চোষা পতঙ্গরা আপনার ধারে কাছেও আসবে না।
১৫. জমানো জল থেকে দূরে থাকুন
খেয়াল রাখুন যেন কোথাও জল জমে না থাকতে পারে। ঘরের আনাচে-কানাচে কিংবা উঠোনে যদি জল জমে থাকে সেখানে মশারা বংশবিস্তার করতে পারে। তাই যেখানেই জল জমুক না কেন, তা ভালোভাবে ভালোভাবে সরিয়ে ফেলুন আর মশার বংশবিস্তার রোধ করুন।
১৬. নারিকেলের আঁশ পোড়ান
নারিকেলের গায়ে থাকা আঁশ এর সাহায্য দূর করতে পারেন মশা। নারিকেলের আঁশ শুকিয়ে সুন্দরভাবে টুকরা করুন। একটি কাঠের পাত্রে রেখে জ্বলন্ত ম্যাচের সাহায্যে কাঠি ধরুন। ৫-৬ মিনিটের মধ্যেই দেখবেন মশা দূর হবে।
মশা সর্ম্পকে আরও জানতেঃ
আমাদের অন্যান্য আর্টিকেল:
- বাংলাদেশের খবরঃ নানান স্বাদের চা !
- বাংলাদেশের খবরঃ অনলাইন জুয়া: থামানো যাচ্ছে না অর্থ পাচার
- বাংলাদেশের খবরঃ ডেঙ্গু হলে যে সকল খাবার খাবেন ও খাবেন না
মশা সর্ম্পকে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেল:
আরও দেখুন:
বাংলাদেশের খবর সাইটটি ব্যবহার করায় আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে “যোগাযোগ” আর্টিকেলটি দেখুন, যোগাযোগের বিস্তারিত দেয়া আছে।
Comments are closed.