স্বাধীনতা উলঙ্গ কিশোর – ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনারা এদেশের ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা চালায়। হাজার হাজার নিরীহ বাঙালি কি এদিন নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। পরেরদিন ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই দিন থেকেই বাংলাদেশ ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় থাকে।

নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী (জন্ম ২১ জুন ১৯৪৫, ৭ আষাঢ় ১৩৫২ বঙ্গাব্দ), যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত, একজন বাংলাদেশী কবি। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন ও ছবি এঁকেছেন। তার কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা, এ-বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে।
১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের অন্তর্ভূত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তার স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য।
তাকে ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়।
স্বাধীনতা উলঙ্গ কিশোর – নির্মলেন্দু গুণ
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উল্ঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছো পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও।
তোমার পরমায়ু বৃদ্ধি পাক আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে,
প্রাত্যহিক বাহুর পেশীতে, জীবনের রাজপথে,
মিছিলে মিছিলে; তুমি বেঁচে থাকো, তুমি দীর্ঘজীবী হও।
তোমার হা-করা মুখে প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে
সূর্যাস্ত অবধি হরতাল ছিল একদিন,
ছিল ধর্মঘট, ছিলো কারখানার ধুলো।
তুমি বেঁচেছিলে মানুষের কলকোলাহলে,
জননীর নাভিমূলে ক্ষতচিহ্ন রেখে
যে তুমি উল্ঙ্গ শিশু রাজপথে বেরিয়ে এসেছো,
সে-ই তুমি আর কতদিন ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা’ বলে
ঘুরবে উলঙ্গ হয়ে পথে পথে সম্রাটের মতো?
জননীর নাভিমূল থেকে ক্ষতচিহ্ন মুছে দিয়ে
উদ্ধত হাতের মুঠোয় নেচে ওঠা, বেঁচে থাকা
হে আমার দূঃখ, স্বাধীনতা, তুমিও পোশাক পরো;
ক্ষান্ত করো উলঙ্গ ভ্রমণ, নয়তো আমারো শরীরি থেকে
ছিঁড়ে ফেলো স্বাধীনতা নামের পতাকা।
বলো উলঙ্গতা স্বাধীনতা নয়,
বলো দূঃখ কোনো স্বাধীনতা নয়,
বলো ক্ষুধা কোন স্বাধীনতা নয়,
বলো ঘৃণা কোন স্বাধীনতা নয়।
জননীর নাভিমূল ছিন্ন-করা রক্তজ কিশোর তুমি
স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও। তুমি বেঁচে থাকো
আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে, প্রেমে, বল পেন্সিলের
যথেচ্ছ অক্ষরে,
শব্দে,
যৌবনে,
কবিতায়।
স্বাধীনতা উলঙ্গ কিশোর কবিতা আবৃত্তিঃ
আরও দেখুনঃ