৭পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান,এমপি, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আজ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দেশ আজ উন্নয়নশীল পর্যায় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে। দেশের এই ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা জরুরী। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে”।

সংগঠনের কেন্দ্রিয় কার্যালয় কবি সুফিয়া কামাল ভবনের আনোয়ারা বেগম- মুনিরা খান স্মৃতি মিলনায়তনে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি: ভবিষ্যতের রূপরেখা প্রণয়নে নারীর অংশীদারিত্বের অন্তর্ভূক্তি’ বিষয়ক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম.এম. আকাশ, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান এবং দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর বিশেষ প্রতিনিধি মুনিমা সুলতানা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

[ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।স্থিতিশীল পরিবেশ এর সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নানা বাধা অতিক্রম করে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। ]
গ্রামীণ নারীর উন্নয়ন, বিভিন্ন খাতে নারী কোটা বৃদ্ধি, শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি প্রতিটি বিষয়ে তিনি কাজ করে চলেছেন। বর্তমান সরকারের যে কোন প্রকল্প গ্রহণের সময়ও নারীদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নারী বান্ধব যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, অনেক সময় সুবিধাভোগীদের সচেতনতার অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়না। তিনি মহিলা পরিষদকে এসব বিষয়ে নারীদের সচেতন করতে কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি জানান, সার্বিক উন্নয়নে নারীর অংশীদারিত্বের অবস্থা নির্ণয় করতে মানসম্মত ডাটাবেজ তৈরিতে সরকার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে টেকসই উন্নত দেশ হিসেবে রূপান্তরিত করতে নারীবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়নের সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, নারী ইস্যূতে যে কোনো নীতিমালা প্রণয়নে সঠিক বিভাজিত উপাত্ত সংগ্রহ করা, সামষ্টিক অথনৈতিক নীতিমালা প্রণয়নের কেন্দ্রে নারীকে অন্তর্ভূক্ত করা, কর্মনিয়োজন ও আয়ে নারীর অংশগ্রহণ বিস্তৃত করা এবং বাজেট বৃদ্ধি ও সামাজিক সুরক্ষায় নারীকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
সর্বোপরি বাজেট বরাদ্দ ও নীতমালা প্রণয়নে বিভিন্ন প্রান্তিক ও দরিদ্র নারীদের চাহিদা ও আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন থাকতে হবে। অধ্যাপক এম.এম. আকাশ জাতীয় অর্থনীতিকে টেকসই করতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করে কৃষিতে ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে সমাজে বিদ্যমান সকল বৈষম্য দূর করতে হবে। ড.. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য নারীকে মূলধারায় রাখতে সহায়ক কর্মসূচি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি সমাজের সকল ক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জনে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি এবং জবাবদিহিতামূলক রাজনীতি নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। তিনি নারীর উন্নয়ন রূপরেখায় সঠিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য জেন্ডার বিভাজিত তথ্য ও পরিসংখ্যান হালনাগাদ করার সুপারিশ করেন।
অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী নারীর নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা, সেক্স ডিসএগ্রিগেটেড ডাটা এবং নারীর জন্য বিনিয়োগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জন এক ধরণের উদযাপন। তিনি সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং সম্পদ সম্পত্তিতে নারীর মালিকানা নিশ্চিত করার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর বিশেষ প্রতিনিধি মুনিমা সুলতানা বলেন, জেন্ডার বাজেটের আলোকে নারীবান্ধব বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। তিনি নারীদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান এবং শ্রমখাতে নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, স্বাধীনতার পর এদেশের লড়াকু মানুষেরা নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলেছে। নারীরা জাতীয় অর্থনীতির হাল ধরেছেন। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের পথে অনেক সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেও নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেজন্য অধিকার ও মর্যাদার ভিত্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
Comments are closed.