সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ৬২ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে

সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের সবগুলো প্রকল্পের কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, এ পর্যন্ত মোট ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা’র এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ৬২ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে

সুনামগঞ্জ: তাদের তথ্যমতে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে ২০২১-২২ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় ফসল রক্ষার জন্য মোট ৭২৪টি ছোট বড় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।

যার কার্যকাল গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সবগুলো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৬২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
এখনো গড়ে প্রকল্পগুলোর ৩৮ শতাংশ কাজ বাকি আছে বলে দাবি করছে বেসরকারি সংগঠন ‘পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা’।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপচেলায়  দৈবচয়ন পদ্মতিতে ১০৮টি বাঁধের উপর সংস্থাটি এক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজাসহ পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, মাত্র ৮ ভাগ বাঁধে মাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঘাস লাগানো হয়েছে ৩ ভাগ বাঁধে। সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ মিটার দূর থেকে বাঁধের মাটি আনার কথা থাকলেও ৩৫ ভাগ বাঁধে এই নিয়ম মানা হয়নি।

যেসব বাঁধে মাটির কাজ সম্পন্ন করার হয়নি এসব বাঁধে মাটি দুরমুজ (কম্পেকশন) ও ঢাল বজায় রাখার কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। যার ফলে যে লক্ষ্যে এ সকল বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কার করা হচ্ছে- সেগুলো কতটুকু সফল হবে, সে নিয়ে হাওরের কৃষকদের মধ্য যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে বলে তারা জানান।

সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ৬২ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে

তাদের জরিপ অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫২ ভাগ বাঁধে ২:১ ঢাল বজায় রাখা হয়নি। যা নীতিমালা অনুযায়ী থাকার কথা। ১৮ ভাগ বাঁধে মাটি দুরমুজ করা হয়েছে,বাকিগুলো এখনো হয়নি।

এছাড়া জরীপে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সঠিক নয় বলে মনে করেন হাওর এলাকার ৫৮ ভাগ মানুষ। তারা রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে পিআইসি গঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।

একই সঙ্গে সংস্থার জরীপে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার কারণ হিসেবে প্রকল্প প্রাক্ষলন ও পিআইসি গঠনে বিলম্ব, অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, হাওর থেকে দেরিতে পানি নামা ও ড্রেজার মেশিনের স্বল্পতার কথা উল্লেখ করেন।

এছাড়াও বাঁধের মাটির দুস্প্রাপ্যতা ও প্রকল্প গঠনে অনিয়মের সমস্যার কথা তাদের জরিপ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। তারা বাঁধের বিকল্প হিসেবে হাওর এলাকার বুরো ফসল রক্ষায় স্থায়ী সমাধানে  উজানে ও ভাটিতে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য অবিলম্বে খননের জন্য সরকারের কাছে তারা দাবি করেন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শামসুদ্দোহা ‘বাসস’কে জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা থাকলেও, বিভিন্ন কারণে প্রকল্পগুলোর কাজ যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি।

সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ৬২ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে

এ সময়ে মাটির কাজ মোটামোটি শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পগুলোর ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে আরও ১০ দিন সময় চেয়ে উচ্চ পর্যায়ে তারা আবেদন করেছেন বলে তিনি জানান।

এছাড়া প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোন অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ আসলে তারা তা খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটিও রয়েছে বলে তিনি জানান।

আরও দেখুনঃ

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে সেণ্ট্রাল অক্সিজেন সেবা চালু

সুনামগঞ্জ জেলা