মুজিবনগরে চুল দিয়ে ক্যাপ তৈরির কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে নারীরা

জেলার মুজিবনগরে নারীদের নতুন কর্মসংস্থানের পথ সৃস্টি হয়েছে পরচুলা বা চুল দিয়ে ক্যাপ তৈরি করার কাজের মাধ্যমে। চুল দিয়ে  ক্যাপ তৈরির কারখানায় কাজ করছেন এলাকার দরিদ্র নারী ও স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। টাক মাথার জন্য ব্যবহার করা এসব পরচুলা তৈরি করে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করছেন তাঁরা। ফলে নিজেদের লেখাপড়াসহ সংসারের খরচে ভূমিকা রাখছে তাদের এ উপার্জন।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মুজিবনগর রয়েছে দু’টি ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরির কারখানা। সেখানে নারীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এ কাজে নিয়োজিত হয়েছে। তাদের হাতের কারিশমায় তৈরি ‘হেয়ার ক্যাপ’ চীনসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

 

মুজিবনগরে চুল দিয়ে ক্যাপ তৈরির কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে নারীরামুজিবনগরে চুল দিয়ে ক্যাপ তৈরির কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে নারীরা

প্রায় ৬ মাস আগে মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ভবরপাড়া গ্রামের দিলিপ মল্লিক, সোনাপুর গ্রামের সোহরাব হোসেনসহ কয়েকজন ব্যক্তির উদ্যোগে গড়ে ওঠে পরচুলা ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরির কারখানা। সেখানেই এলাকার বেকার শিক্ষিত নারীরা খুঁজে পায় বাড়তি আয়সহ নতুন কর্মসংস্থানের।

মুজিবনগর
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখন সীমিত আকারে হেয়ার ক্যাপ তৈরির প্রশিক্ষণ চলছে। তাদের তৈরি করা হেয়ার ক্যাপ ঢাকার উত্তরার কিছু প্রতিষ্ঠান কারখানা থেকে কিনে নিয়ে যান। পরে তারা চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন।
স্থানীয়রা জানান, এমন একটি কারখানা হওয়াই আমাদের গ্রামের অনেক গরীব পরিবারের মেয়েরা  এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এমনকি যারা লেখাপড়া করে তারাও এখানে কাজ করে তাদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছে।

পরচুল ’হেয়ার ক্যাপ’ তৈরি কারখানায় কাজ করেন মুক্তা খাঁন। তিনি বলেন, আমরা মেয়েরা আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে এতদিন স্বামী কিম্বা অভিভাবকদের কাছে হাত পাততে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে কারখানা হওয়ায় আমাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। একারণে এখন আর তাদের কারো গলগ্রহ হতে হয় না। যা রোজগার করছি তাই দিয়ে নিজেদের খরচ করেও সংসারের কাজে সহায়তা করতে পারছি।
কলেজ শিক্ষার্থী দৃষ্টি মল্লিক ও ফারজানা খাতুন জানান, করোনার কারণে আমাদের কলেজ বন্ধ।

সারাদিন চুপচাপ বসে থাকি, কোনো কাজ থাকে না। তাই অবসর সময়ে আমরা এ কাজ করি। চুল দিয়ে একটি ক্যাপ তৈরি করতে পারলে আমরা ৫ শত থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত পাই। একটি ক্যাপ তৈরি করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। এতে আমাদের যা ইনকাম হয় তাই দিয়ে আমাদের নিজেদের খরচ উঠে যায়।
স্বামী পরিত্যক্তা ববিতা খাতুন জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তারপর আমি আমার বাবার বাড়ি চলে আসি। আমার বাবা একজন দিনমজুর। তিনি ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারেন না। তিনি যা উপার্জন করেন, তাই দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে আমাদের পরিপূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে পারতেন না।

আমার দুইটা ছোট ভাই রয়েছে, তারা কেউ কাজ করার মতো না।তাই বাধ্য হয়ে আমি এ কাজটা করে  পরিবারের হাল ধরেছি।  এখান থেকে আমার যা আয় রোজগার হয় তাই দিয়ে আমার বাবাকে সহযোগিতা করি।
ভবরপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য দিলিপ মল্লিক জানান, আমি প্রথমত কয়েকজনকে নিয়ে পরচুলা ’হেয়ার ক্যাপ’ তৈরির কাজ করতাম। কিন্তু আস্তে আস্তে অনেক মেয়েরা কাজের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। এখন আমার কারখানায় বর্তমানে ৭০ জন নারীরা কাজ করে। আর এ কাজের মাধ্যমে অনেক হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েরা তাদের কর্মসংস্থান তৈরি করছে।

তিনি আরো জানান, ঢাকার উত্তরার কিছু প্রতিষ্ঠান চুল দিয়ে যায় এ ক্যাপ তৈরি করার জন্য। আবার তাদের কাছেই এ ক্যাপ গুলো বিক্রি করা হয়। পরে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এগুলো রপ্তানি করেন।
সোনাপুর গ্রামের হেয়ার ক্যাপ কারখানার মালিক সোহরাব হোসেন জানান, ২ মাস আগে প্রথমে নিজের সংসারের কথা চিন্তা করে হেয়ার ক্যাপ বা পরচুলা তৈরির কাজ নিয়ে আসলেও বর্তমানে গ্রামের অনেক শিক্ষিত ও বেকার নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছে পরচুলা তৈরির কাজ করতে।মুজিবনগর

আমার কারখানায় ৪০ থেকে ৫০ জন মেয়ে কাজ করতো। তবে করোনার কারণে আগের থেকে কাজ কমে গেছে। বর্তমানে কয়েকজন মেয়ে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরচুল তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন জানান, এ ধরনের শিল্প কারখানার মাধ্যেমে গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোর পরিবর্তন ঘটবে। প্রতিটি গ্রামে যদি এরকম ছোট ছোট শিল্প গড়ে ওঠে তাহলে গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে।

মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার জানান, মুজিবনগর উপজেলা সমগ্র বাংলাদেশের জন্য রোল মডেল। এখানে, অনুকূল পরিবেশের কারণে দরিদ্র ও বেকার যুবক-যুবতীরা  এ ধরণের কাজে নিয়োজিত হয়ে আয় করছে যা দেখে ভালো লাগে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তা হিসেবে অনেকের এ পেশায় বিকাশ ঘটছে। উভয়েই সাবলম্বী হচ্ছে। তাঁরা নিজের ও দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন দেশেও এখানে তৈরি চুলের ক্যাপ রপ্তানি হচ্ছে।

আরও দেখুনঃ

ওজোনস্তর সুরক্ষায় শীতলীকরণ যন্ত্রের ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করা জরুরি : রাষ্ট্রপতি

Comments are closed.