কুমিল্লায় তৈরি হচ্ছে সাগরে মাছ ধরার জাল

চার দশকের বেশি সময় ধরে সাগরে মাছ ধরার জাল-রশি উৎপাদন ও সরবরাহে দেশের বাজারে এক বিশ্বস্ত নাম কুমিল্লার ফরিদ গ্রুপ। সত্তর ও আশির দশকে যখন সাগরে মাছ ধরার জন্য বিদেশি জালের ছড়াছড়ি, তখন ফরিদ গ্রুপই দেশেই বাণিজ্যিকভাবে মানসম্পন্ন জা-ল উৎপাদন শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে জা-ল বানানোর জন্য বিসিকেই কারখানা গড়ে তোলার পর থেকে শুধু দেশে নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে ফরিদ গ্রুপের তৈরি মাছ ধরার জা-ল-রশি। প্রধান রপ্তানি বাজার প্রতিবেশী ভারত। তবে শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক এবং আফ্রিকার দেশ মালিতেও যায় তাদের জাল ও রশি।

কুমিল্লায় তৈরি হচ্ছে সাগরে মাছ ধরার জাল

 

কুমিল্লার বিসিকে ফরিদ গ্রুপের দুটি কারখানা সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কারখানায় চীন, জাপান ও জার্মানি থেকে আনা অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে হাতের স্পর্শ ছাড়াই জাল বানানো হচ্ছে। মেশিনে একদিকে সুতা ঢুকছে, অন্যদিকে জাল বের হয়ে আসছে। অবশ্য জালের আয়তন ও জালের ভেতরের ফাঁকা কতটা হবে, তা আগে থেকে ঠিক করে দিতে হয়।

প্রতিটি মেশিনের পাশে অ্যাপ্রোন পরা একজন করে কর্মী দাঁড়িয়ে। তিনি ঠিকমতো জাল বোনা হচ্ছে কি না, তা তদারক করেন। প্রয়োজন মতো সুইচ টেপেন। কারখানাটির অন্য পাশে চলছে জাল ও রশি প্যাকেটজাত করার কাজ। জাল-রশির চালান প্যাকেটজাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা পরিবেশকদের কাছে চলে যায়।

কুমিল্লায় তৈরি হচ্ছে সাগরে মাছ ধরার জাল

 

কারখানার কর্মকর্তারা জানান, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তাঁদের দুটি কারখানায় ৪০ ধরনের নেট ও রশি তৈরি হয়। প্রতিদিন ১২ টন জা-ল বানানোর সক্ষমতা আছে জা-লের কারখানাটির। আর দৈনিক রশি বানানোর সক্ষমতা প্রায় ১৫ টন। ফরিদ গ্রুপের পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা মানসম্পন্ন জা-ল ও রশি তৈরি করি। তাই গ্রাহকেরা আমাদের পণ্যের প্রতি আস্থা রাখছেন। আমরা পণ্যের মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে কোনো ছাড় দিই না। তিনি আরোও বলেন, প্রতিবছর জা-লের চাহিদা একই রকম থাকে না। যে বছর বেশি মাছ ধরা পড়ে, সেবার চাহিদা বাড়ে। কারণ, জা-লে বেশি মাছ আটকা পড়লে প্রাণ বাঁচাতে জা-ল ছিঁড়ে বেরিয়ে যেতে চায়। এতে জা-লের ক্ষতি হয় এবং স্থায়িত্ব কমে।ফরিদ গ্রুপের কারখানার শ্রমিকেরা সপ্তাহে দুই দিন ছুটি উপভোগ করেন।

কুমিল্লায় তৈরি হচ্ছে সাগরে মাছ ধরার জাল

 

এক দিন স্বাভাবিক সাপ্তাহিক ছুটি। আরেক দিনের ছুটিটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডির ছুটি হিসেবে পরিচিত। কারও যদি দ্বিতীয় ছুটি প্রয়োজন না হয়, তাহলে ওই কর্মী কাজে যোগ দিলে দৈনিক মজুরির দ্বিগুণ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান কর্মকর্তারা। বিসিকের কারখানার পাশেই একটি ভবন হলো ফরিদ গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। সেখানকার তিনতলায় বড় একটি ডাইনিং হল রয়েছে। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা থাকে।  মালিক-কর্মকর্তারা এক টেবিলে বসেই দুপুরের খাবার খান। সরেজমিনেও এ চিত্র পাওয়া গেছে।

তিন পালায় ২৪ ঘণ্টা কাজ চলে কারখানায়। শ্রমিকদের জন্যও আলাদা ক্যানটিন আছে। ৩ হাজার শ্রমিকের প্রত্যেকের জন্য মাত্র ৬০ টাকায় মোট তিন বেলা খাবার বা তিনটি মিলের ব্যবস্থা আছে। এ দিকে বাংলাদেশেই জা-লের ব্যবসার সম্ভাবনা আরও বেশি বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধে বাংলাদেশ জিতেছে। ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার বেড়েছে, যা বাংলাদেশের স্থল আয়তনের প্রায় সমান। বাংলাদেশের ভূভাগের আয়তন প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটার।

কুমিল্লায় তৈরি হচ্ছে সাগরে মাছ ধরার জাল

 

২০১২ সালে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালত বিরোধপূর্ণ সমুদ্র এলাকা নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেন। এর ফলে ব্লুু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির আকার আরও বাড়ল। ফলে বিশাল সমুদ্রের সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। এতে সমুদ্রের তলদেশের তেল-গ্যাস আহরণ ছাড়াও সামুদ্রিক মাছ ধরা যাবে। ফলে ভবিষ্যতে সাগরে মাছ ধরার জা-লের ব্যবসার সম্ভাবনা আরও বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আরও দেখুনঃ

বাগেরহাটে হরিণের চামড়াসহ চার শিকারি আটক

কুমিল্লা