বিপদে পুলিশকে পাশে পেয়ে মানুষ যেন স্বস্তি বোধ করে তা নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি দোরগোড়ায় পরিষেবা পৌঁছে দিতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনগণ যেন বিপদে পুলিশকে পাশে পেয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,“আধুনিক সময়ে নাগরিক সেবার ধারণাকে প্রাধান্য দিয়ে পুলিশি সেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। পুলিশ বাহিনী যেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা বা সন্ত্রাস দমন বা যে কোন কাজ করতে গেলে জনগণের সহায়তা একান্ত ভাবে দরকার।”

 

বিপদে পুলিশকে পাশে পেয়ে মানুষ যেন স্বস্তি বোধ করে তা নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী

 

বিপদে পুলিশকে পাশে পেয়ে মানুষ যেন স্বস্তি বোধ করে তা নিশ্চিত করুনঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী সারদা’র প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৮ তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, মানুষ যেকোন বিপদে পড়লে পুলিশকে পাশে পেলে তারা যেন অন্তত আশ্বস্ত হয়। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই পুলিশ তার পেশাদারিত্ব এবং সহমর্মিতা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে যথার্থই বলেছিলেন, “আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশী শোষকদের পুলিশ না, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজের দিনে পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যদের আমি অনুরোধ করবো জাতির পিতা যে স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়তে চেয়েছিলেন তা গড়ার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।

 

বিপদে পুলিশকে পাশে পেয়ে মানুষ যেন স্বস্তি বোধ করে তা নিশ্চিত করুন 5 e1674994765975 বিপদে পুলিশকে পাশে পেয়ে মানুষ যেন স্বস্তি বোধ করে তা নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী

 

সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা চাই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে, বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনগোষ্ঠী সাথে সাথে আমাদের পুলিশ বাহিনীকেও স্মার্ট পুলিশ বাহিনী আমরা গড়ে তুলতে চাই।

নবীন পুলিশ সদস্যদের শেখ হাসিনা বলেন, এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আপনারাও আমাদের সাথী। এজন্য আপনাদেরকে যুগোপযোগী কর্মকৌশল গ্রহণ এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী সারদা পুলিশ একাডেমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ (অ্যাড.আইজিপি) আবু হাসান মুহাম্মদ তারেক তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

চৌকস পুলিশ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী  খোলা জিপে  চড়ে পাসিং আউট প্যারেড পরিদর্শন করেন।

তিনি রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ এবং সেরা প্রবেশনারি এএসপিদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন।

এএসপি ইয়াকুব হোসেন প্যারেড কমান্ডার বা প্যারেড অ্যাডজুট্যান্ট এবং সহকারী প্যারেড কমান্ডার হিসেবে প্রবেশনারি এএসপি শুভ্র দেব কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন।

১২ জন মহিলা সহ ৯৭ জনের শিক্ষানবিশ এএসপি এক বছরের দীর্ঘ প্রশিক্ষণে অংশ নেন। পরীক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশ সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সনদও পেয়েছেন।

প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে এএসপি মো. জাহাঙ্গীর কবির ‘সেরা একাডেমিক’ পুরস্কার, এএসপি মো. সাজ্জাদুর রহমান ‘বেস্ট হর্সম্যানশিপ’, এএসপি শুভ্র দেব ‘বেস্ট ইন ফিল্ড প্রবেশনার’ এবং এএসপি মো. রাসেল রানা ‘সেরা শুটার’ এবং সাকিবুল আলম ভূঁইয়া “বেষ্ট প্রবেশনার”পুরস্কার পেয়েছেন।

 

বিপদে পুলিশকে পাশে পেয়ে মানুষ যেন স্বস্তি বোধ করে তা নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী

 

প্রধানমন্ত্রী এএসপির ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের পাসিং আউট প্যারেড উপলক্ষে একটি কেক কাটেন এবং একাাডেমীতে একটি জয়তুন গাছের চারা রোপণ, ভিজিটর বইয়ে স্বাক্ষর এবং প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে ফটো সেশনেও অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত শোষণ-বঞ্চনা মুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে তা সম্পূর্ণ নস্যাৎ হয়ে  যায় এবং এরপর শুরু হয় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা।

সংবিধান লঙ্ঘন করে বার বার ক্ষমতার পরিবর্তনের ফলে আমাদের পুলিশ বাহিনী বা সশ¯্র বাহিনীর অনেককেই জীবন দিতে হয়েছে। ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়। একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে ’৯৬ সালে।

এরআগে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ’৭৫ এর বিয়োগান্তক ঘটনার সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যাওয়া তাঁকে ও ছোট বোন শেখ রেহানাকে  ছয় বছর দেশে ফিরতে দেয়নি। ’৮১ সালে আওয়ামী লীগ তাঁকে সভাপতি নির্বাচন করলে একরকম জোর করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। আর তারপর থেকে তাঁর একটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে আবারো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা এবং স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেয়া।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ বা মার্শাল’ল বাদ দিয়ে যেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ্এবং এই গণতন্ত্র যাতে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকে সে পদক্ষেপও আওয়ামী লীগ সরকার নিয়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়া পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও দেখা দেয়।

এই হত্যা, লুটপাট, বোমা হামলা ও আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে সবসময় রাষ্ট্রের অর্থনীতির গতিকে স্থবির করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়, যাতে কোনমতেই বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে না পারে।

তাঁর শাসনামলে পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এসব বোমাবাজী, সন্ত্রাসি কর্মকান্ড,জঙ্গিবাদ এবং মাদক প্রতিরোধে ব্যাপক প্রশংসনীয় ভুমিকা রেখে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ সবের পাশাপাশি করোনাকালিন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও তিনি পুলিশ সদস্যদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সে সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত খাবার পৌঁছে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দেয়ায় প্রযুক্তি যেমন মানুষের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে তেমনি অপরাধেরও ধরন বদলে গেছে।

 

বিপদে পুলিশকে পাশে পেয়ে মানুষ যেন স্বস্তি বোধ করে তা নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী

 

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম-এগুলোও নতুন নতুন রুপে সামনে আসছে, যেগুলো মোকাবিলায় ইতোমধ্যে তাঁর সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পুলিশের ভুমিকা দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত রাখতে সহায়তা করেছে। তিনি এ সময় হলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসি হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

শেখ হাসিনা  জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও পুলিশ সদস্যদের বিশেষ করে নারী পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন ‘মাদক,দুর্নীতি, সাইবার ক্রাইম ও অন্যান্য সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ যেভাবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, এভাবেই আপনারা নতুন অফিসার যারা আপনাদেরকেও এই কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। দেশ আমাদের, এটাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে’।

জরুরী সেবা ’৯৯৯’ এর রেসপন্স করার ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের কর্মকান্ডের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার চায় পুলিশ বাহিনী পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও বিজ্ঞান ভিত্তিকভাবে গড়ে উঠবে। সে জন্য বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সরঞ্জামাদিও সরকার ক্রয় করে দিয়েছে।

‘মাষ্টার্স অব পুলিশ সায়েন্স’ ডিগ্রী প্রদানে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সারদা পুলিশ একাডেমীর ম্যানুয়াল পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে যুগোপযোগীকরণ এবং কারিকুলাম পরিবর্তনে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টা মাথায় রেখে মেডিটেশন কোর্স অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রথাগত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি হাইইন্টেনসিটি প্রশিক্ষণের বিষয়গুলোও যোগ করা হয়েছে। আধুনিক শ্রেনী কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, ফরেনসিক ডেমোনেষ্ট্রেশন ল্যাব, সুটিং সিমুলেটর প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে একাডেমী থেকে যথাযথ মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমাদের পুলিশ বাহিনী আরো দক্ষ ও সক্ষম হয়ে উঠছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৪ বছরের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের দেশ যেন আর কখনো পিছিয়ে না পড়ে। ২০০৮ এর নির্বাচনে আমরা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম রূপকল্প-২০২১ সেটা বাস্তবায়ন করেছি।

জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা উদযাপন করেছি। ঠিক সেই সময় আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য ডেলটা প্ল্যান-২১০০ আমরা প্রণোয়ন করে দিয়ে গেলাম।

বাংলাদেশকে আর কেউ পিছনে নিতে পারবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। আমি চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে এ দেশকে আমরা আরও উন্নত করবো এবং সেভাবেই আপনারা আপনাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে আর কেউ পিছে টানতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।

আরও দেখুনঃ