মোমেন-ব্লিংকেন বৈঠকে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও রাশেদ চৌধুরীর হস্তান্তর বিষয়ে আলোচনা

বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও রাশেদ চৌধুরীর হস্তান্তর বিষয়ে আলোচনার আপডেট : পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরসহ একাধিক বিষয় তুলে ধরেছেন। সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে মিডিয়াকে মোমেন বলেন, ‘ব্লিংকেনের সঙ্গে চমৎকার আলোচনা হয়েছে।’

 

মোমেন-ব্লিংকেন বৈঠকে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও রাশেদ চৌধুরীর হস্তান্তর বিষয়ে আলোচনা

 

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ব্লিংকেন তার সূচনা বক্তব্যে বলেছেন যে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদারে’ ওয়াশিংটন ঢাকার সাথে একত্রে কাজ করতে ইচ্ছুক। ড. মোমেন বলেন, ব্লিংকেন বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হয়ে উঠেছে, ওয়াশিংটন সত্যিই দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব জোরদার করতে আগামী ৫০ একসঙ্গে কাজ শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছে।

মোমেন বলেন, তিনি ব্লিংকেনকে বলেছেন ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হওয়ার আশঙ্কা ছিল, কিন্তু  এখন বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে তারা র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, রোহিঙ্গা ইস্যু, ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশল, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াসহ ব্যাপক বিষয়ে আলোচনা করেন।

মোমেন-ব্লিংকেন বৈঠকে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও রাশেদ চৌধুরীর হস্তান্তর বিষয়ে আলোচনা

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা:

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি মার্কিন পক্ষকে র‌্যাব এবং এর কিছু বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন কারণ, এই এলিট ফোর্স বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমন এবং মাদক পাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি যে আমরা সব প্রতিকারের বিষয় নিয়েছি (মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্যা সমাধানের জন্য),’ তিনি আরও জানান, গত চার মাসে র‌্যাবের হাতে কোনো হত্যাকান্ড ঘটেনি।
মোমেন বলেন, র‌্যাব হয়তো কখনো কখনো কিছু বাড়াবাড়ি করেছে কিন্তু জবাবদিহিতার জন্য একটি নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে এবং যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।

তিনি আরও জানান  যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বড় ধরণের সমস্যা ছিল তখন আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়।
মোমেন বলেন, ‘এই ধরনের ক্ষেত্রে, র‌্যাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল (জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে)।’  তিনি বলেন, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি র‌্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এবং এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের সাথে তুলনা করেছেন।

ডা. মোমেন বলেন, ব্লিঙ্কেন গত চার বছরে র‌্যাবের কর্মকা-ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে।
‘আমি খুব আশাবাদী যে র‌্যাবের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে,’ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন।

 

মোমেন-ব্লিংকেন বৈঠকে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও রাশেদ চৌধুরীর হস্তান্তর বিষয়ে আলোচনা

রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর:

পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের দায়ে দ-প্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও উত্থাপন করেন।
মোমেন ব্লিঙ্কেনকে  বলেন, ‘আমেরিকার নাগরিকদের একজন খুনিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়া উচিৎ নয়।’
তিনি বলেন, এর আগে রাশেদকে হস্তান্তরের একটি প্রক্রিয়া চলছিল এবং সেটি  শেষ করতে হবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খুনি রাশেদ চৌধুরীর হস্তান্তর দুই দেশের ৫০ বছরের সম্পর্কের উদযাপনে একটি গেম চেঞ্জার হবে।

বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ:

ড.  মোমেন বাংলাদেশে বিশেষ করে অবকাঠামো, আইটি ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে বিনিয়োগে বৈচিত্র আনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি ব্লিঙ্কেনকে বলেন,”মার্কিন বিনিয়োগের নব্বই শতাংশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে। আমি চাই আপনি আইটি এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করুন।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ৭ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ওষুধ খাতে বিনিয়োগ করলে সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ পেতে পারে।
ড.  মোমেন বাংলাদেশকে ব্যবসা সহজ করতে সাহায্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান যাতে ঢাকা তার অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে আরও বেশি এফডিআই আকর্ষণ করতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি দেশে বাড়বে যা ওয়াশিংটনকে নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিকের উদ্বেগ নিরসনে সাহায্য করবে।
মোমেন বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যে, আমরা একটি মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উন্মুক্ত এবং সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চাই। যদি আপনার উপস্থিতি থাকে তবে আমরা একসাথে কাজ করব।’  জবাবে ব্লিঙ্কেন বলেন, মার্কিন পক্ষ এই বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।

জিএসপি পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে:

২০১৩ সাল থেকে স্থগিত মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের জিএসপি সুবিধা পুনঃস্থাপনের বিষয়টিও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা পুনঃস্থাপন করবে।
ডা. মোমেন জানান,  শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে এবং এটিকে স্বীকৃতি  দেওয়া দরকার।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রম সমস্যা আন্তর্জাতিক স্তর অনুযায়ী অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি রোডম্যাপ তৈরিরও  প্রস্তাব করেন। তিনি ব্লিঙ্কেনকে বললেন, “আসুন আলোচনা করা যাক।”

মোমেন-ব্লিংকেন বৈঠকে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও রাশেদ চৌধুরীর হস্তান্তর বিষয়ে আলোচনা
রোহিঙ্গা ইস্যু:

মোমেন ব্লিঙ্কেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সহিংসতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং সংকট সমাধানে আসেম এবং কোয়াড সদস্যদের সাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি ব্লিঙ্কেনকে বলেন:

“সঙ্কটের টেকসই সমাধানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক কিছু করা উচিত।”

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া:

ডা. মোমেন একটি স্বচ্ছ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে বিঙ্কেনকে অবহিত করেন।

তিনি তার প্রতিপক্ষকে বলেন,

“আমাদের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা আছে। আমাদের একটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) আছে। তারা (কমিশন) স্বাধীন এবং নির্বাচনের সময় তারাই বস।”

মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে।
ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে সরাসরি বিমানের ফ্লাইট চালু করার জন্য বিঙ্কেনকে উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ এমপি, নাইম রাজ্জাক এমপি, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা)  তৌফিক ইসলাম শাতিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও দেখুনঃ

Comments are closed.