আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচির দিনে রাজধানীর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে দেখা গেছে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাসভবন ঘিরে সকাল থেকেই অবস্থান নিয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ‘জুলাইপন্থি’ কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা, যারা সকাল থেকে টহল ও নজরদারিতে ব্যস্ত রয়েছেন।

অভূতপূর্ব নিরাপত্তা বলয়
সকালের পর থেকেই ৩২ নম্বরের আশপাশে বসানো হয়েছে লোহার ব্যারিকেড। পুলিশ টহল গাড়ি ঘুরছে প্রধান সড়ক ও গলিপথে। পথচারীদের ব্যাগ, মোবাইল ফোন, এমনকি পরিচয়পত্র পর্যন্ত তল্লাশি করা হচ্ছে। কেউ ঢুকলে কিংবা বের হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এলাকার পরিবেশ এখন অনেকটাই অবরুদ্ধ ও স্নায়ুচাপপূর্ণ।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,
“এখন ৩২ নম্বর এলাকায় ঢুকতে গেলে যেন একটা সেনানিবাস পেরোতে হয়। সকাল থেকে টানা চেকিং চলছে।”

বারবার হামলার ইতিহাস
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক বাসভবনটি একাধিকবার হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। এতে ভবনের ভেতরের মূল্যবান আসবাব ও স্মারক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় প্রশাসন ভবন ও আশপাশের এলাকা এখন কার্যত ‘নো-গো জোন’ ঘোষণা করেছে।

প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
তবে কেন এই ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনটিতে এখনো এত কড়া নিরাপত্তা প্রয়োজন, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
কেউ প্রশ্ন তুলছেন,
“যে ভবনটি ইতিমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত, সেটি পাহারা দিয়ে কী রক্ষা করা হচ্ছে?”
আবার কেউ লিখেছেন,
“পথচারীদের ব্যাগ বা মোবাইল তল্লাশি করে কী পাওয়া যাবে?”
এই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা নিরাপত্তা হুমকির আশঙ্কা পেয়েছি। তাই যে কোনও উসকানি ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছি।”
‘জুলাইপন্থিদের’ সক্রিয় উপস্থিতি
পুলিশের পাশাপাশি সক্রিয় দেখা গেছে ‘জুলাইপন্থি’ সংগঠনের কর্মীদের। তারা পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে এলাকায় টহল দিচ্ছেন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন এবং আগন্তুকদের গতিবিধি নজরদারি করছেন।
একজন দোকানদার বলেন,
“সকাল থেকে এলাকা জুড়ে টান টান উত্তেজনা। পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক, গাড়ির হর্ণ — সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে ৩২ নম্বর এখন একটা ঘেরাও করা দুর্গ।”

প্রশাসনের দাবি: এটি সাময়িক ব্যবস্থা
নিরাপত্তার কড়াকড়ি নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ নিরাপত্তা জোরদারকে প্রশংসা করছেন, আবার কেউ এটিকে অতিরিক্ত ও ভয় সৃষ্টিকারী বলে মনে করছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন,
“এটি সাময়িক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধীরে ধীরে শিথিল করা হবে।”
৩২ নম্বর — ইতিহাস ও আবেগের প্রতীক
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী। এখানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন। এখানেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে সংঘটিত হয় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, যা আজও জাতির বেদনার প্রতীক।
যদিও বাড়িটি এখন আংশিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত, তবু এটি আজও জাতির আবেগ, শ্রদ্ধা ও স্মৃতির কেন্দ্রবিন্দু।
এ কারণে, নিরাপত্তা কড়াকড়ি ঘিরে বিতর্ক থাকলেও, অনেকেই বলছেন—
“৩২ নম্বর শুধু একটি ঠিকানা নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের হৃদস্পন্দন।”
