বর্ষার আগমনে যশোরের চাঁচড়া হ্যাচারী পল্লীতে রেণুপোনা বিক্রি শুরু হয়েছে।এখান থেকে পাইকারি ক্রেতারা রেণু পোনা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকেন।
Table of Contents
আশির দশকে স্বল্প পরিসরে চাঁচড়া হ্যাচারীতে দেশি ও বিদেশি জাতের মাছের রেণু পোনা উৎপাদন শুরু হয়। আস্তে আস্তে মাছের পোনা উৎপাদনের পরিধি বাড়তে থাকে।
মাছ চাষে রুপালী বিপ্লব ঘটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চাঁচড়া হ্যাচারী পল্লীতে। এ রুপালী বিপ্লব বেকারত্ব ঘুচানোর পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে বলে জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে।
যশোর জেলা হ্যাচারী মালিক সমিতির সভাপতি মো: ফিরোজ খান জানান, আশির দশকে যশো-রে মাছের রেণু উৎপাদন শুরু হয়ে পরবর্তীতে বিস্তার ঘটতে থাকে। রেণুপোনা উৎপাদনের জন্য এ জেলায় শতাধিক হ্যাচারী রয়েছে।
হ্যাচারীগুলোতে উৎপাদিত রেণুপোনা নিয়ে পুকুর,ঘের,বাওড় ও জলাশায়ে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন কয়েক লাখ মানুষ। যশো-র শহরের চাঁচড়াসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠেছে শতাধিক হ্যাচারী।
এসব হ্যাচারীতে রুই, কাতলা, থাই পাঙাশ, শিং, কই, মাগুর, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া,লোনা পানির টেংরা,কালবাউশ, মিরর কার্প, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণুপোনা উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
প্রতিবছর এসব হ্যাচারীতে কমপক্ষে দু’শ কোটি টাকার রেণুপোনা বিক্রি হয়। এখানকার উৎপাদিত রেণুপোনা বিক্রি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৎস্য ব্যবসায়ীদেরও জীবিকা নির্বাহ হয়ে থেকে।
এসব হ্যাচাীরতে উৎপাদিত সাদা মাছের রেণুপোনা দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করছে বলে জানান জেলা হ্যাচারী মালিক সমিতির সভাপতি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মেদ জানান, যশো-রে কার্প জাতীয় মাছ চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। স্বাদু পানির মাছের মধ্যে শিং, কৈ ও মাগুর ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশি কৈয়ের পাশাপাশি চাষ হচ্ছে থাই ও ভিয়েতনামের কৈ।
এখানকার রেণু মাছের গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে। এসব রেণুপোনা জেলার বিভিন্ন এলাকা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া,চুয়াডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর,খুলনা, পাবনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর,চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয় বলে তিনি জানান।
সূত্রে জানা গেছে, চাঁচড়া মোড়ে মুজিব সড়ক ও যশো-র বাসটার্মিনাল সড়কের দুধারে স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের রেণুপোনা ক্রেতাদের সমাগমে প্রতিদিনই প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে জায়গাটি।
ভোর হতে চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড় থেকে বিশাল এলাকাজুড়ে সড়কের দুই ধারে প্রচুর সংখ্যক ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন এসে রেণু মাছের পোনা বোঝাইয়ের অপেক্ষায় থাকে। এসব গাড়িতে করে দূর-দূরান্তের গন্তব্যে রেণুপোনা নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা।
যশোর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: সাইদুর রহমান রেজা বলেন, যশো-রের হ্যাচারি পল্লীখ্যাত চাঁচড়ায় উৎপাদিত ভালোমানের মাছের রেণুপোনার খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশব্যাপী।
চলতি বছরে ৭০ মেট্রিক টন রেণুপোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নতজাতের ও আধুনিক পদ্ধতিতে মাছের পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যে জেলা ও সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগ সবধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এরই মধ্যে চাঁচড়ায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মাণ করা হয়েছে মাছের রেণুপোনা বিক্রির আধুনিক বিক্রয় কেন্দ্র।দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিক্রয় কেন্দ্রটি চালু করা হবে।
এখান থেকে মাছের রেণু-পোনা ক্রয়-বিক্রয় স্বল্প সময়ের মধ্যে করতে পারবেন চাঁচড়া হ্যাচারী পল্লীর রেণুপোনা ক্রেতা-বিক্রেতারা। এটি চালু হলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে এ অঞ্চলের মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
আরও দেখুনঃ
হাতি সংরক্ষণে নতুন প্রকল্প নিয়ে আসছে বন বিভাগ
খাদ্য নিরাপত্তায় দেশের কৃষিজমি সুরক্ষা প্রয়োজন : তথ্যমন্ত্রী
নতুন বাজেট অর্থনীতি আরও গতিশীল করবে : অর্থমন্ত্রী
হ্যাচারি
যশোর জেলা
Comments are closed.