গরীবের ডাক্তার শাহজাহান

শাহজাহান ডাক্তার সবার সঙ্গেই হাসিখুশি। রোগীরা স্বচ্ছন্দে তাঁর কাছে সব খুলে বলে। সাধারণ রোগীদের তিনি বর্ণনা শুনেই ওষুধ দেন। জটিল রোগের চিকিৎসা তাঁর দ্বারা সম্ভব না হলে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন।

গরীবের ডাক্তার শাহজাহান

সময় পেলে শাহাজাহান ডাক্তার বাড়ি গিয়েও রোগী দেখে আসেন। ডাক্তার শাহজাহান বললেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের সেবা করে যেতে চাই। তিনি গরীবের  ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। থাকেন পৈতৃক বাড়িতে।

চিকিৎসা প্রশাসনের বড় দায়িত্ব পালন করলেও নেই ব্যক্তিগত গাড়ি। সাদামাটা জীবনেই তাঁর যত আনন্দ। আন্তরিক ব্যবহার আর পরামর্শে মানুষকে জাগিয়ে তোলেন। রোগীর ভিজিট নেন স্বল্প। যাঁদের সামর্থ্য নেই তাঁদের দেখেন বিনামূল্যে।

গরীবের ডাক্তার শাহজাহান

কোম্পানির স্যাম্পল পেলে তাও দিয়ে দেন গরিব রোগীদের। তিনি ডাক্তার গোলাম শাহ-জাহান। ডাকনাম ইকবাল। এ ছাড়া যক্ষ্মা প্রতিরোধে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সৎ, পরোপকারী ও সাদা মনের মানুষ হিসেবে  ডাক্তার গোলাম শাহ-জাহান পরিচিত।

তাঁর স্কুলজীবনের যাত্রা কুমিল্লা ঠাকুরপাড়ার লতিফা সুন্দরী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি, প্রথমে সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন তিনি।

১৯৮৪ সালে সহকারী সার্জন পদে ইনসার্ভিস ট্রেইনি হিসেবে প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। রাঙামাটির রাজস্থলী, মুরাদনগরের গান্দ্রা সাব-সেন্টার, বরুড়া উপজেলায়, কুমিল্লা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিসে মেডিকেল অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৩ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় যোগদান করেন। ২০১৫ সালের প্রথমার্ধে কুমিল্লায় ডেপুটি সিভিল সার্জন ও শেষার্ধে সহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকা জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন।

গরীবের ডাক্তার শাহজাহান

২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরে সহকারী পরিচালক, কৈশোর ও বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই অবসরে আসেন। প্রচারবিমুখ ডা. গোলাম শাহ-জাহান বিনয়ের সঙ্গে তাঁর কৃতিত্বপূর্ণ কর্মজীবনকে আড়ালে রাখতে চান।

সাদামাটা জীবনের বিষয়ে বাসসকে বলেন, চেম্বার করার বিষয়ে উদাসীন ছিলাম। চিকিৎসা বিষয়ে উন্নত ডিগ্রি নিইনি। চেম্বার জমানোর মতো সময় দেইনি। নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করেছি।

পারিবারিকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছি। মা-বাবা সব সময় সত্য বলতে উৎসাহিত করেছেন। জীবনভর খুব বেশি প্রাচুর্য না পেলেও সম্মান পেয়েছি।

তাঁর পথচলায় স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও সন্তানদের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের সহযোগিতা না পেলে আমাকে আরও বেশি অর্থের জন্য দৌঁড়াতে হতো। সেবামূলক কাজে সময় দিতে পারতাম না।

স্ত্রী জেসমিন আক্তার বাসসকে বলেন, আমাদের পরিবারে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা কম ছিল। তবে আমাদের পারিবারিক জীবনে স্বস্তি ও আনন্দের সংকট ছিল না। আমরা মানিয়ে নিয়েছি।

গরীবের ডাক্তার শাহজাহান

তিনি বাইরে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল, পরিবারে একজন দায়িত্বশীল পিতা। সন্তানরা তাঁকে নিয়ে গর্ব করে। তারাও চেষ্টা করে পিতার মতো স্বচ্ছ মানুষ হতে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও কুমিল্লার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বাসসকে বলেন, তাঁকে সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি। ডা. গোলাম শাহ-জাহান একজন আপাদমস্তকক ভদ্রলোক। তিনি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন।

আরও দেখুনঃ

চাঁদপুরে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৮২০ টাকা জরিমানা আদায়

চিকিৎসক