সীতাকুন্ডে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এক জনের মৃত্যুদন্ড

সীতাকুন্ডে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের পর হত্যা মামলায় এক জনকে  মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। আজ চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের চতুর্থ আদালতে বিচারক  মোহাম্মদ জামিউল হায়দার এ রায় দেন।
পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটে। একই রায়ে আদালত অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন। এ মাম-লার দুই আসামি মারা যাওয়ায় তাদের মামলার বিচার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সীতাকুন্ডে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এক জনের মৃত্যুদন্ড

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি জসীম উদ্দিন বাপ্পী (৩৫) সীতাকু- উপজেলার কুমিরা এলাকার মৃত ইদ্রিস মিয়ার ছেলে। একই এলাকার বাসিন্দা আইয়ূব খান (৩৬) ও শরীফ আহম্মদ (৫০) খালাস পান। এদের মধ্যে আইয়ূব খান ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। হাজতে থাকা জসীম ও শরীফকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। পরে তাদেরকে আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়। মা-মলার আরও দুই আসামি সরওয়ার আলম সেরু (৫৫) ও আব্দুল মোতালেব লিটন (৪২) জেলহাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান। এ কারণে বিচারের দায় থেকে তাদেরকে আইন অনুযায়ী অব্যাহতি দেয়া হয়।

সীতাকুন্ডে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এক জনের মৃত্যুদন্ড

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট নিখিল কুমার নাথ জানান, আলোচিত এ মাম-লায় আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দোহাতীতভাবেই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে আসামি জসীমকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন বিচারক। মা-মলা সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূ শারমিন আক্তারের বাড়িও সীতাকু- উপজেলার কুমিরা এলাকায়। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ৪০ বছর।

২০১৭ সালের ২৯ মার্চ বিকেল ৫টা থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন ভোর ৬টায় কুমিরা রেলস্টেশনের পূর্বপাশে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের দক্ষিণে কবির সওদাগরের পাহাড়ে তার লাশ পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়, তাকে গণধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় শারমিনের মেয়ে ইয়াসমিন বাদি হয়ে সীতাকু- থানায় মামলা দায়ের করেন।

সীতাকুন্ডে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এক জনের মৃত্যুদন্ড

পুলিশ তদন্তে পাঁচজনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে আইয়ূব খান ছাড়া বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। জসীম উদ্দিন বাপ্পী ধর্ষণের পর খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ১৭ জনকে আদালতে উপস্থাপন করে সাক্ষ্যগ্রহণ করে। বিচারকের আদেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জসীম উদ্দিন বাপ্পীকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৩) ধারায় মৃত্যুদ- এবং এক লাখ টাকা জরিমানা দেওয়ার আদেশ দেয়া হয়।

সীতাকুন্ডে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এক জনের মৃত্যুদন্ড

এদিকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে ভিকটিমের মেয়ে মামলার বাদী ইয়াসমিন রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার মা অত্যন্ত কষ্ট করে সংসার চালাতেন। দিনে এনে দিনে খেতাম আমরা। পাহাড়ে বাগানে কাজ করতেন মা। লাকড়ি খুঁজে এনে বিক্রি করতেন। যারা খালাস পেয়েছে শরীফ ও আইয়ূব, এরাই মূল খুনি। এদের কাছ থেকে সাহস পেয়েছে বলেই জসীম আমার মাকে নির্যাতন করে খুন করেছে। তাদেরকে মামলার দায় থেকে খালাস দেয়ার বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে যাব।’ এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী বিবেকানন্দ চৌধুরী জানান, দু’জন আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারাও ভিকটিমকে ধর্ষণের পর খুনের পরিকল্পনকারী। পাঁচজন মিলে সংঘবদ্ধভাবেই এ অপরাধ সংঘটিত করেছিল। উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো।