করোনায় রোগ প্রতিরোধ , করোনা (COVID-19) একটি ভাইরাস জনিত রোগ। যা SARS-CoV-2 ভাইরাসের কারণে হওয়া একটি সংক্রামক রোগ। করোনা COVID-19-এ আক্রান্ত হওয়া বেশিরভাগ মানুষই হালকা থেকে মাঝারি মানের উপসর্গের সম্মুখীন হয় এবং বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে কিছু লোক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
করোনা যেভাবে ছড়ায়
করোনা সংক্রামিত ব্যক্তি যখন হাঁচি-কাশি দেই, কথা বলে, গান গায় বা শ্বাস নেয় তখন ভাইরাসটির মুখ অথবা নাক দিয়ে ছোট তরল উপাদান ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই উপাদানগুলো বড় আকারের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত ড্রপলেট থেকে তুলনায় ছোট অ্যারোসল হতে পারে। করোনা COVID-19-এ আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলে। সংক্রমিত কোনও জায়গা স্পর্শ করে তারপর আপনার চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করলে এর দ্বারা সংক্রামিত হতে পারেন।
করোনায় রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে চাই ইমিউনিটি
সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গসমূহ:
- জ্বর
- শুকনো কাশি
- ক্লান্তিভাব
- কম সাধারণ উপসর্গসমূহ:
- ব্যথা ও যন্ত্রণা
- গলা ব্যথা
- ডায়রিয়া
- কনজাংটিভাইটিস
- মাথা ব্যথা
- স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া
আপনার যদি করোনা হয় তাহলে আপনাকে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিজেকে এবং আপনার চারপাশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখুন।
COVID-19 ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকাতে:

- অন্যান্য ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ (৩ ফুট) দূরত্ব বজায় রাখুন, এমনকি তাদের অসুস্থ বলে মনে না হলেও এটি পালন করুন।
- অতিরিক্ত ভীর স্থানে মাস্ক পড়ুন, বিশেষত বাড়ির ভিতরে মাক্স পড়ুন
- আলো বাতাস যুক্ত স্থান থাকার চেষ্টা করুন। ঘরের ভিতরে থাকলে জানলা খুলে দিন।
- আপনার হাত ঘন ঘন পরিষ্কার করুন। সাবান, পানি বা অ্যালকোহল ব্যবহার করুন।
- নির্দিষ্ট সময়ে ভ্যাকসিন নিয়ে নিন। ভ্যাকসিনেশন সম্পর্কে স্থানীয় নির্দেশনা মেনে চলুন।
- কাশি বা হাঁচির সময় আপনার নাক ও মুখ ঢেকে রাখুন।
- বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিনি। জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আগে থেকে কল করে নিলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী দ্রুত আপনাকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যথাযথ সুবিধা দিতে পারবে। এর ফলে আপনি সুরক্ষিত থাকবেন ।
- সঠিক ভাবে মাস্ক পরুন। শুধু মাস্ক ব্যবহার করলেই COVID-19-এর সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে না এবং তার পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং হাত ধুতে হবে।
করোনা সংক্রামন রুখতে দরকার ইমিউনিটির:
১. পর্যাপ্ত ঘুম
এলোমেলো জীবনব্যবস্থা স্বাস্থ্যের ওপর অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। ঘুম এর মধ্যে অন্যতম ঘুম না হলে স্বাস্থ্য ঝুকি থাকে। একজন মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। এ অভ্যাসটি ঘুমের সময় নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে।
২. শরীরচর্চার অভ্যাস
প্রতিদিন নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করার অভ্যাস করতে হবে। করোনা কালীন সময়ে জিমে গিয়ে না করতে পারলে বাসায় শরীরচর্চা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যোগ-ব্যায়ামও ভালো কাজ করে।
৩. খাবার
শরীরকে ভালো রাখতে হলে অবশ্যই জাঙ্ক ফুড ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রাকৃতিক বিভিন্ন ভেষজে ইমিউনিটি বাড়ানোর উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পানীয় শরীরকে হাইড্রেট রাখে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এই ভেষজ ব্যবহার করতে পারেন। যা ইমিউনিটি বাড়াতে দুর্দান্ত কাজ করে।
- আদা: সর্দি-কাশি কিংবা জ্বর, এই সব সমস্যার ক্ষেত্রে আদা দিয়ে চা দুর্দান্ত কার্যকর। আদা গলা ব্যথা সারাতে খুব ভালো কাজ করে। আদাতে আছে উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
- পুদিনা: গরমের সময় ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীর হাইড্রেট রাখতে পুদিনা পাতার খুবই কার্যকর। পুদিনা এবং রোজমেরি দিয়ে চা বানালে তা স্মৃতিশক্তি উন্নত ও শরীরকে সতেজ করতে সহায়তা করে। পেট ভাপা, গ্যাসের সমস্যার ক্ষেত্রেও পুদিনা অত্যন্ত উপকারী। পুদিনা শরীরকে ডিটক্স করে।
- তুলসী: তুলসী হলো আয়ুর্বেদের অন্যতম ঔষধি। এটি কেবলমাত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বৃদ্ধি করে না, বিভিন্ন জীবাণুর বিরুদ্ধেও লড়াই করে। চর্মরোগ সারাতে তুলসী ভূমিকা অন্যতম। রক্তে শর্করার সহ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়তা করে।
- মৌরি: মৌরি বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করে। এক চামচ মৌরির পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । এটি সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং শ্বাসযন্ত্রের পথ পরিষ্কার করে । মৌরিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিনের অন্যতম উপাদান।
৪. পানি

পানির অপর নাম জীবন। পানি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খবুই উপকারী। রোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির সুস্থ থাকতে হলে দৈনিক গড়ে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। পানির পাশাপাশি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পানিসমৃদ্ধ খাবার ও ফলমূল; যেমন— তরমুজ, কমলালেবু, লেটুস, স্ট্রবেরি খেতে হবে।
৫. হাস্যোজ্জ্বল থাকা
সুস্থ থাকার জন্য অবসাদ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। আত্মবিশ্বাসী, প্রেরণাদায়ক ও রসিক মানুষ বেশি দিন বাঁচে।
৬. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা
ধূমপান ও মদ্যপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে।করোনায় ধূমপায়ীদের সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকগুণ বাড়িয়ে তোলে। যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।