ঐতিহ্যবাহী ইলিয়টগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ : দূর-দূরান্তের মুসল্লীরা আসেন জুমা পড়তে ,জেলার দাউদকান্দি উপজেলার প্রাচীনতম ইলিয়টগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ। মস-জিদটির বয়স প্রায় দুইশত বছর। মসজিদটি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ বাজার বাসস্ট্র্যান্ড থেকে প্রায় ৫০০ ফুট দক্ষিণে অবস্থিত। প্রতি শুক্রবার বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জুমার নামায পড়তে ভিড় জমায় এখানে ।
মসজিদটির ভিতর ও বাহিরে রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য বিভিন্ন কারুকাজ করা। চিনা মাটির প্লেট ভাঙ্গা দ্বারা বিভিন্ন ডিজাইনে মস-জিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজি-টির চারপাশের ওয়ালগুলো ২ ফুট পুরো। যার কারনে শীতকালে মসজিদের ভিতর গরম আর গরমকালে ঠান্ডা অনুভূতি হয়। পুরো মস-জিদ টি চুনশুরকি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। ভিতরের মিম্বরটিতে রয়েছে সুনিপুণ হাতে নির্মিত অপূর্ব কারুকাজ। যে কেউ একবার দেখলে পরে মন ভরে যায় সৌন্দর্যের কারনে। মসজিদটি পূর্ণ সংস্কার করা হয় ১৩০৩ বাংলা ও ১৮৯৬ ইংরেজি সালে। যা মস-জিদের সামনের দেয়ালে পূণঃসংস্কারের বাংলা সন লেখা রয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় ধর্মপ্রাণ ও তৎকালীন প্রভাবশালী দানবীর ব্যক্তি হাজী মরহুম ওয়ারিশ হোসেন মুন্সী ও তার ছোট ভাই মরহুম বেলায়েত হোসেন মুন্সী মসজিদটি নির্মাণ করেন।
স্থানীয় এলাকার নাম অনুসারে ইলিয়টগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ নামে মসজিদটি নামকরণ করা হয়। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট, প্রস্থ ৫০ ফুট। একসঙ্গে ৮০/৯০ জন মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। চুন-সুরকী দিয়ে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে অপরুপ কারুকাজ রয়েছে। মসজিদের ছাদের চার কোনায় চারটি ছোট ছোট মিনার রয়েছে।
মস-জিদটি কুমিল্লা শহর থেকে পশ্চিমে ৩৮ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ বাস স্টেশনের ৫০০ ফুট দক্ষিণে অবস্থিত। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাজী ওয়ারিশ হোসেন মুন্সী মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন নিঃসন্তান আর বেলায়েত হোসেন মুন্সীর মৃত্যুকালে ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে রেখে যান। বেলায়েত হোসেন মুন্সীর মৃত্যুর পর তার মেঝ ছেলে হাজী কামাল হোসেন মুন্সী মসজি-দের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর মস-জিদের সবধরনের দেখাশোনা করতেন।
পরবর্তীতে মসজি-দের মুসুল্লীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় তার আমলে মস-জিদটি একতলা থেকে দ্বিতীয় তলা উন্নীতকরণ কাজসহ মস-জিদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। পরবর্তীতে কামাল হোসেন মুন্সীর মৃত্যুর পর তার ছেলে আনোয়ার হোসেন রানা মুন্সী মস-জিদটি এখন দেখাশোনা করছেন। বর্তমান সময়ে এসে মস-জিদটির দক্ষিণ পাশে মস-জিদের খালি জায়গাটি মস-জিদের সাথে সংযুক্ত করে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করেন ভবটির নিচ তলায় মস-জিদের খতিব থাকার ব্যবস্থা করা হয় এবং দ্বিতীয় তলায় একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা স্থাপন করেন। মাদ্রাসাটির নামকরণ করা হয় ইলিয়টগঞ্জ বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা। হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বর্তমানে ৫৫ জন ছাত্র রয়েছেন।
মস-জিদটির বর্তমান সেক্রেটারি মুন্সী আনোয়ার সাহাদাত রানা বাসসকে জানান, মরহুম ওয়ারিশ হোসেন মুন্সী ও মরহুম বেলায়েত হোসেন মুন্সী তারা ছিলেন আপন ভাই। মস-জিদটি নির্মাণের পর মস-জিদটির নাম দেন ইলিয়টগঞ্জ বাজার জামে মস-জিদ। তৎসময়ে এলাকায় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোন মস-জিদ ছিল না। তাই তিনি এলাকার মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য নিজেদের উদ্যোগে মস-জিদটি নির্মাণ করেন। মস-জিদটির উওরপাশে রেখেছেন মসজি-দের মোতাল্লিনদের থাকার জন্য একটি পাকাঘর এবং মস-জিদের মুসুল্লীদের অযুও গোসল করার জন্য তৎসময়ে একটি পুকুর খনন করে যান। যাতে রয়েছে পাকা ঘাট। তবে কালের বিবর্তনে মসজি-দের পুকুরটি বর্তমানে বাজারের ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে।
প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান বাসসকে বলেন, দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ মুন্সী বাড়ির কৃতি সন্তান ধর্মপ্রাণ ও তৎকালীন প্রভাবশালী দানবীর ব্যক্তি হাজী মরহুম ওয়ারিশ হোসেন মুন্সী ও তার আপন ছোট ভাই মরহুম বেলায়েত হোসেন মুন্সী মস-জিদটি প্রায় দুইশত বছর আগে নির্মাণ করেন। পুরো ম-সজিদটি চুন-সুরকী দিয়ে নির্মিত মস-জিদটির ভেতরে অপরুপ কারুকাজ রয়েছে। মসজিদটি প্রাচীনতম হওয়ায় এটি দেখার জন্য প্রতি শুক্রবার বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জুমার নামায পড়তে ভিড় জমায়।
আরও দেখুনঃ