উত্তরা গণভবনে পারিজাতের পাতায় রঙের খেলা

অপরুপ স্থাপত্য শৈলীর রাজবাড়ি নাটোরের উত্তরা গণভবন এর বিশাল আঙিনা দুষ্প্রাপ্য গাছের সমাহারে ভরপুর। ঋতুভেদে এসব গাছ আর ফুল রুপে রসে গন্ধে অনন্য হয়ে ওঠে। এখন সময় পারিজাতের। তবে এই সময় ফুলের নয়, পাতার। এ ভরা বরষায় পারিজাতের গাছে গাছে পাতারা রঙ ছড়াচ্ছে। বিবর্তনের ধারায় পাঁচ পর্বে মোচা থেকে পাতারা পূর্ণতা পাচ্ছে।পারিজাত মূলত দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের গাছ। ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, ত্রিনাদাদ ও টোবাগোতে পারিজাতের অবস্থান। অন্য দেশে এমন আধিক্য চোখে পড়ে না।

উত্তরা গণভবনে পারিজাতের পাতায় রঙের খেলা

 

প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় এলাকার দেশগুলোতেও পারিজাতের উপস্থিতি আছে। ভেনেজুয়েলাতে এটি গোলাপ নামে পরিচিত। আমাদের দেশে এ গাছ দুষ্প্রাপ্য। কক্সবাজার, কার্জন হল প্রাঙ্গনসহ দেশের কয়েকটি জায়গাতে পারিজাত আছে।নাটোরের উত্তরা গণভবন এর সিংহ দরজা অতিক্রম করলে হাতের বামে অভিজাত অবস্থান দুইটি পারিজাতের।

অনেক জায়গা জুড়ে কান্ড ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকটা ছাতার মত অবয়ব। কান্ডের কালো আর পুরু আবরণ জানান দিচ্ছে, অতি প্রাচীনকালের গাছ। অনেক জায়গা জুড়ে বিস্তার, প্রাচীনত্ব আর সৌন্দর্য যেন বলতে চাইছে, আমিই রাজবাড়ির রাজা! অবশ্য রাজবাড়ির ইটালিয়ান গার্ডেনে রাজার আমলের পরে রোপিত তিনটি পারিজাত আছে। নতুন চারা তৈরী করে গত বছর রাণীমহালের তালতলা ঘাটে সংযোজন হয়েছে আরো একটি পারিজাত।

উত্তরা গণভবনে পারিজাতের পাতায় রঙের খেলা

বসন্তে পারিজাতের কমলা গুচ্ছ ফুলগুলো খুব সহজেই নজর কাড়ে। তবে ফুলকে ছাড়িয়ে নতুন পাতার আগমনকাল অসাধারণ। মোচা থেকে পাতার উৎপত্তি। বাদামী রঙের প্রায় এক ফুট দৈর্ঘ্যরে মোচাগুলো গাছের কান্ডজুড়ে শোভা বর্ধন করছে। মনোযোগ দিয়ে না দেখলে হঠাৎ করেই মনেহবে, মোচাগুলো গাছের কোন অংশ নয়, সৌন্দর্য তৈরীর জন্যে যেন এগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে! কয়েক দিনের ব্যবধানে মোচা খুলে বের হয় প্রায় এক ডজন ঝিরিঝিরি বাদামী দন্ড।

বাদামী জমিনের উপরে মোজাইকের মত সবুজের আগমনী বার্তা। কিন্তু বোঝার উপায় নেই, এসব দন্ডে অর্থাৎ নতুন কান্ডে ঘুমিয়ে আছে হাজারো পাতা! কিছুদিন পরে নরম ঝুমকো লতার মত কান্ডগুলো জানান দেয়, আমার আছে শত শত পাতা। পাঁচটি বিবর্তনের ধারায় বেগুনী মোচাগুলো হাজারো সবুজ পাতায় পল্লবিত হয়। এমন পাতার সৌন্দর্য পারিজাত ছাড়া আর কোথায় পাওয়া যাবে? মনেহয়, অন্য কোথাও নয়।
উপমহাদেশের খ্যাতিমান রাণী ভবানী এবং তাঁর পূর্বসুরী রাজা রাম জীবনের বিশ্বস্ত  রাজ কর্মচারী দয়ারাম রায়কে দিঘাপতিয়া এলাকায় জমিদারী প্রদান করা হয়।

তিনি উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ১৮ মিনিটব্যাপী প্রলয়ঙ্করী এক ভূমিকম্পে দিঘাপতিয়া রাজপ্রাসাদ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। পরে ১৮৯৭ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছরের চেষ্টায় বিদেশী প্রকৌশলী চিত্রকর্ম শিল্পীদের সহায়তায় ৪১.৫০ একর জমির উপর এই রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ রায় মোঘল ও প্রাশ্চাত্য রীতি অনুসারে নান্দনিক কারুকার্যময় রাজপ্রাসাদটি পূনঃনির্মাণ করেন। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিঘাপাতিয়া রাজপ্রাসাদে ‘উত্তরা গণভবন’ হিসেবে নামফলক স্থাপন করেন।

উত্তরা গণভবনে পারিজাতের পাতায় রঙের খেলা

 

সৌখিন রাজার তৎপরতায় দৃষ্টিনন্দন ইটালিয়ান গার্ডেনসহ পুরো রাজবাড়ির আঙিনা দেশী-বিদেশী নানা জাতের ফুলের গাছে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। নাগালিঙ্গম, কর্পুর, এগপ্লান্ট, হৈমন্তী আর পারিজাতের মত অভিজাত ও দুষ্প্রাপ্য গাছের হিরন্ময় উপস্থিতি উত্তরা গণভবনকে আকর্ষনীয় করে তুলেছে। এরমধ্যে পারিজাত হচ্ছে রাজার গাছ আর রাজকীয় গাছ। এসব গাছে গাছে এখন পাতা আসার দিন চলছে। বৃষ্টি¯œাত দৃষ্টি নন্দন নতুন পাতা।

আরও দেখুনঃ

৪২ (42) মণ ওজনের ‘সুলতান’ এবার শেরপুরে কোরবানীর হাটে উঠবে

গণভবন

Comments are closed.