জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস। সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস হয়েছে। সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ স্লোগান নিয়ে এবারের বাজেট পাস করা হলো। দেশের ৫৩তম এই বাজেটের আকার বাড়ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

গত ৬ জুন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।রোববার দুপুরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে এ বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়, যা কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। এর আগে রাষ্ট্রপতির সম্মতিসাপেক্ষে নির্দিষ্টকরণ আইন গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। বাজেট পাসের পর উপস্থিত সকলে টেবিল চাপড়িয়ে বাজেটকে স্বাগত জানান। এ সময় সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের উপস্থিত ছিলেন। তারাও টেবিল চাপড়িয়ে নতুন বাজেটকে স্বাগত জানান।

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

শনিবার বিকেলে সংসদে অর্থ বিল উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং পরে সেটি সংসদে পাস হয়।

এর আগে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখেন। বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও অর্থমন্ত্রীসহ ২৩৬ সংসদ সদস্য বক্তব্য রাখেন। গত ১১ জুন থেকে আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

বাজেটে ব্যক্তির সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ প্রস্তাব করা হলেও সংসদ তা গ্রহণ করেনি। এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ কর বিদ্যমান ২৫ শতাংশই বহাল থাকছে। বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী করহারের ধাপে কিছুটা পরিবর্তন এনে সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন।

এবারের সামগ্রিক বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। ব্যাংকিং খাত ছাড়াও নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

এবারের বাজেটে আগামী ১ জুলাই (সোমবার) থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর-পরবর্তী পেনশন-সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকছে। স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এই স্কিমের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।

 

google news, গুগল নিউজ
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

 

আগামী অর্থবছর থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর-পরবর্তী পেনশন সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। করমুক্ত আয়কর সীমা বিদ্যমান সাড়ে তিন লাখ টাকাই বহাল থাকছে। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, আয়ের প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর কোনও কর দিতে হবে না।

আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন বাজেটে ১৫টি খাতে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। খাতভিত্তিক জনপ্রশাসন খাতে এক লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা, সুদ খাতে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এক লাখ ১১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৮২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৪৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৪২ হাজার ১৪ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৩৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৫ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, গৃহায়ণ খাতে ৬ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা; বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৮ হাজার ৫৭৬ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৮ দশমিক ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা করার বিষয়টি সরকার চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা।

আরও দেখুনঃ