অপারেশন সিন্দুর: পাহালগাম হামলার পর ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে

নয়াদিল্লি/ইসলামাবাদ মে ২০২৫ : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ৬ মে রাতে ভারতের চালানো “অপারেশন সিন্দুর”-এর মাধ্যমে, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নেওয়া, যেখানে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক, যাদের বেশিরভাগই হিন্দু পর্যটক, প্রাণ হারান।

পাহালগাম হামলার পটভূমি

এই হামলা ঘটে আনন্তনাগ জেলার বৈসারণ উপত্যকায়, একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকায়। পাঁচজন সশস্ত্র হামলাকারী, যাদের পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে ধারণা করা হচ্ছে, মুসলিম-নন পর্যটকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায়। হামলায় ২৬ জন নিহত এবং আরও অন্তত ২০ জন আহত হন। হামলাকারীরা সেনাবাহিনীর পোশাক পরা অবস্থায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় এবং তারপর পার্শ্ববর্তী বনে পালিয়ে যায়। প্রথমে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা সেই দাবি প্রত্যাহার করে নেয়।

অপারেশন সিন্দুর: ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়া

এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী “অপারেশন সিন্দুর” চালায়, যেখানে তারা সন্ত্রাসী পরিকাঠামো লক্ষ্য করে নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এটি ছিল “নির্দিষ্ট, পরিমিত এবং উত্তেজনা না-বাড়ানোর” কৌশল, যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা এড়িয়ে চলা হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী এই হামলার পর ঘোষণা করে: “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে”, যা পাহালগাম হামলার নেপথ্যে থাকা অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনার সংকেত।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি

পাকিস্তান জানিয়েছে যে, কোটলি, মুজাফফরাবাদ এবং বাহাওয়ালপুরে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, যেখানে অন্তত এক শিশু নিহত এবং আরও দুইজন আহত হয়েছে। পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের কিছু এলাকায় বিস্ফোরণ ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই হামলাকে “বর্বর উসকানি” বলে অভিহিত করে এবং ঘোষণা দেয়, তারা সময় ও সুযোগমতো এর জবাব দেবে।

পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান তাদের বিমান বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রেখেছে এবং ফ্রন্টলাইন ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান প্রস্তুত রেখেছে। দুই দেশই নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর তাদের প্রতিরক্ষা জোরদার করেছে, ফলে পরিস্থিতি বেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সংযমের আহ্বান

আন্তর্জাতিক মহল দুই পরমাণু-সজ্জিত দেশের এই উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম দেখানোর জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, যাতে পরবর্তী সংঘর্ষ এড়ানো যায়। যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছে এবং এমন পদক্ষেপ এড়ানোর তাগিদ দিয়েছে যা পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।