শারদীয় দুর্গোৎসবে গোপালগঞ্জে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জের মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকেরা। ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরী কাজ শেষ প্রায় শেষ হয়েছে। এ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবেই পূজা আয়োজনে ব্যস্ত  রয়েছেন আয়োজকেরা।

শারদীয় দুর্গোৎসবে গোপালগঞ্জে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

বাংলাদেশ পূঁজা উদযাপন পরিষদ, গোপালগঞ্জ জেলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ২৭৭টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায় ৩৪০টি মন্দিরে পূঁজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩১৫টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৯৮টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩০টি এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৯৪টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবীপক্ষ। ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গা পূজা। চলবে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

Table of Contents

জেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা ও জানা গেছে, শারদীয় দুর্গোৎসবে গোপালগঞ্জের সকল মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। এ বছর দেবী দুর্গা হাতি চড়ে পৃথিবীতে আসবেন আর কৈলাশে ফিরবেন নৌকায় করে। এতে পৃথিবীতে শস্য ও জল বৃদ্ধি পেয়ে শস্যপূর্ণাতে পরিণত হবে বলে মনে করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।  ইতিমধ্যে মন্দিরগুলোতে খঁড় ও মাটি দিয়ে পরম যতেœ গড়ে উঠছে প্রতিমা।

এখন চলছে দোঁ-আঁশ মাটির কাজ। আর এসব প্রতিমা তৈরীতে দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা শিল্পীরা। এরপর রং তুলির টানে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন প্রতিমা শিল্পীরা। দেবী মা দুর্গা তার সাথে বিদ্যার দেবী স্বরসতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী এবং তার সাথে দেব সেনাপতি কার্তিক ও গনেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে তুলবেন নিপুণহাতের ছোঁয়ায়। এরপর ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতীতে মুখরিত হয়ে উঠবে গোপালগঞ্জের পাড়া-মহল্লা।

শারদীয় দুর্গোৎসবে গোপালগঞ্জে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

এ বছর এক-একজন প্রতিমা শিল্পীরা ৪ থেকে ৯টি করে প্রতিমা তৈরী করেছেন। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বোগতির বাজারে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রেখেছেন তারা।

এদিকে, এ বছর জাঁক-জমকভাবে পূজা আয়োজন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজকেরা। দেবী দুর্গার সাথে লক্ষ্মী, গনেশ, কার্তিক ও সরস্বতির পাশাপাশি মহাভারতের দৃশ্যপট ফুটিতে তুলেতে তৈরী করা হচ্ছে অন্যান্য প্রতিমা। আলোকসজ্জ্বার পাশাপাশি প্রসাদ বিতরণেরও আয়োজন করা হচ্ছে।

এদিকে, শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কায্যালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে আলোচনা সভা করেছে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। সভায় আলোকসজ্জ্ব থেকে বিরত, প্রতিটি মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

প্রতিমা শিল্পী টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সরজিত সেন, গোপালগঞ্জ সদরের রূপাহাতি গ্রামের সজীব মন্ডল, সৌমিত্র বিশ্বাস জানান, এবছর এক-একজন ভাস্কর ৪ থেকে ১০ টি করে প্রতিমা তৈরি করেছেন। পূজা শুরুর দিন পযন্ত রং এর কাজ করতে হবে তাদের।

তবে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পাচ্ছেন তারা। সেই সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির এ বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেলেও তারপরেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।

শারদীয় দুর্গোৎসবে গোপালগঞ্জে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

জেলা শহরের সাহাপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের আয়োজক হারান সাহা ও শ্রী শ্রী গনেশ পাগল সেবাশ্রমের আয়োজক সুজয় বিশ্বাস জানান, ইতোমধ্যে আমরা সরকার ও পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা পেয়েছি। বাইরে আলোকসজ্জ্বা কারার উপর মানা থাকলেও মন্দিরের ভিতরে আলোকসজ্জ্বা করা হবে। দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে সড়কগুলোতে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপশি মন্দির কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডা: অসিত কুমার মল্লিক জানান, ইতিমধ্যে আমাদের সাথে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ ডিআইডি হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার আয়েশা দিদ্দিকা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত মোঃ নাসীর উদ্দীন পূজা নিয়ে পস্তুতি সভা করেছেন। এ বছর শুধু মাত্র মন্দিরের মধ্যে আলোকসজ্জ্বা করা হবে।

বাইরের সড়কগুলোতে আলোকসজ্জ্বা, গান বাজনাসহ কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে না। পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপশি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক রাখতে বলা হয়েছে।

শারদীয় দুর্গোৎসবে গোপালগঞ্জে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

সরকারী আইন মানার বিষয়টি তারা দেখভাল করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করা হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা গোপালগঞ্জে এ বছর নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও দেখুনঃ

Comments are closed.