কেউ কথা রাখেনি কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কেউ কথা রাখেনি কবিতা – কেউ কথা রাখেনি কবিতা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত কবিতা। কেউ কথা রাখেনি কবিতা -টির মাধ্যমে কবি তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্বে আপন মানুষের কথা না রাখার যে যন্ত্রণা ও বেদনা তা মর্মস্পর্শীর ভাষায় তুলে ধরেছেন। “কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি”। কবিতার লাইনের মাধ্যমে কবি জানিয়েছেন এভাবেই তিনি ৩৩ টা বছর পার করেছেন।

কেউ কথা রাখেনি কবিতা - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কেউ কথা রাখেনি কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়।

তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি “কাকাবাবু-সন্তু” নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

 

কেউ কথা রাখেনি কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিলো
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা এসে চলে গেল, কিন্তু সেই বোষ্টুমি আর এলো না
পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি ।

মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে !
নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এই ঘরের ছাদ
ফুঁরে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে ?

একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্কর বাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি ভেতরে রাস উৎসব
অবিরল রঙ্গের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পড়া ফর্সা রমণীরা কতরকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি !
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন আমরাও…
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না !

বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে !
ভালবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮ নীলপদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে কোন নারী !
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনা !

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় 3 কেউ কথা রাখেনি কবিতা - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 

কেউ কথা রাখেনি কবিতার বিশ্লেষণঃ

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত কবিতা ‘কেউ কথা রাখেনি’। কবি জীবনের বিভিন্ন পর্বে আপন জানা মানুষদের কথা না রাখার বেদনা ও যাতনা মর্মস্পর্শী ভাষায় তুলে ধরেছেন। এভাবে তিনি তেত্রিশটি বছর পার করেছেন।

কবিতার একটি ঘটনা- মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলি বলেছিল, তুমি বড় হও দাদাঠাকুর, তোমাকে তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাব। কবির প্রশ্ন- নাদের আলি আমি আর কত বড় হব? আমার মাথা ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তবে কি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবে?

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় 1 1 কেউ কথা রাখেনি কবিতা - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 

কেউ কথা রাখেনি কবিতা আবৃত্তিঃ

 

 

আরও দেখুনঃ

Comments are closed.